Monday, May 13, 2024

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা - কুরআন ও হাদিসের আলোকে


নামাজ ভঙ্গের কারন সমূহ

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা কুরআন হাদিসের আলোকে। 


কুরবানির পরিচয়ঃ 

কুরবানীকে আরবী ভাষায় “উদ্বহিয়্যাহ” বলা হয়। এর অর্থ হল-ওই পশু যা কুরবানীর দিন যবেহ করা হয়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু যবেই করাই কুরবানী। 

কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলতঃ 

কুরবানি হলো ইসলামের একটি শি’য়ার বা মহান নিদর্শন। কুরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন- فصل لربك وانحر ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানি কর।’ (সূরা কাউসার, আয়াত-২)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, من وجد سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে’। (ইবনে মাজাহ-৩১২৩)।  যারা কুরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্কবাণী।

কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, لن ينال الله لحومها ولا دمائها ولكن يناله التقوي منكم  ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না উহার (জন্তুর) গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হাজ্জ, আয়াত-৩৭)।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 من وجد سعة ولم يضح، فلا يقربن مصلانا
অর্থ : যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। (মুসনাদে আহমদ; হা.নং ৮২৫৬)

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
يا أيها الناس: إن على كل أهل بيت في كل عام أضحية
অর্থ : হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হলো প্রতিবছর কুরবানী দেয়া। (সুনানে ইবনে মাজাহ; হা.নং ৩১২৫)

এই আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কুরবানী করা ওয়াজিব।

কোরবানির ইতিহাসঃ

(১) পৃথিবীর ইতিহাসে হযরত আদম আ. এর দুই পুত্রের কুরবানির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর কুরবানি সূচনা হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না।

সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’। (সূরা মায়েদা-২৭) যদি তুমি আমার প্রতি তোমার হাত প্রসারিত কর আমাকে হত্যা করার জন্য, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য আমার হাত তোমার প্রতি প্রসারিত করব না। নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি’। (সূরা মায়েদা-২৮)

(২) মুসলিম উম্মাহর জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. এর পুত্র হযরত ইসমাইল আ. কে কুরবানি করার মাধ্যমে দ্বিতীয় ইতিহাসের এক নতুন মাত্রা তৈরি হয়। তবে ইসলামে হযরত ইসমাইল আ.এর স্বরনে কুরবানি করা হয়।

কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন , কুরবানি হলো তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন।
কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা কুরআন হাদিসের আলোকে

আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’।অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে* কাত করে শুইয়ে দিল । ( সূরা আস- সাফফাতঃ- ১০২-৩)

কুরবানির নেসাব ও তার মেয়াদঃ 

কুরবানির নেসাব হলো হাজাতে আসলিয়া তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি ব্যতিরেকে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা তার মূল্য বা সমমূল্যের সম্পদের মালিক হওয়া।

প্রকাশ থাকে যে, জাকাতের নেসাব যা, কুরবানির নেসাবও তা। তবে কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে একটু অতিরিক্ত বিষয় রয়েছে। তা হলো- অত্যাবশ্যকীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অন্যান্য অতিরিক্ত আসবাবপত্র, সৌখিন মালপত্র, খোরাকি বাদে অতিরিক্ত জায়গা-জমি, খালিঘর বা ভাড়া ঘর (যার ভাড়ার ওপর জীবিকা নির্ভরশীল নয়) এসব কিছুর মূল্য কুরবানির নেসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/২৯২)।

জাকাত ও কুরবানির নেসাবের সময়সীমা নিয়েও পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো-জাকাতের নেসাব পূর্ণ এক বছর ঘুরে আসা শর্ত; কিন্তু কুরবানির নেসাব পূর্ণ এক বছর ঘুরে আসা শর্ত নয়। কেবল জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিন দিনের যে কোনো একদিন নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে। (ফতোয়ায়ে শামি)।

কুরবানির পশুর বিধানঃ

কুরবানির জন্য পশু আগেই নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত পশু জবেহর আগে কোনো কাজে ব্যবহার বা তা থেকে কোনো ধরনের উপকার নেওয়া যাবে না। যেমন-দান করা, বিক্রি করা, কৃষিকাজে ব্যবহার করা, দুধ ও পশম বিক্রি করা ইত্যাদি।

কুরবানির পশু ছাগল, ভেড়া কিংবা দুম্বা হলে একটিতে এক ভাগ এবং উট, গরু কিংবা মহিষ হলে একটিতে সাত ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে। গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হলো কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত ও দেখতে সুন্দর হওয়া। কুরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে।

কুরবানির উদ্দেশ্যে পশু ক্রয়ের পর যদি বাচ্চা হয় বা জবেহ করার পর তার পেট থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে হুকুম হলো- মায়ের সঙ্গে বাচ্চাটিকেও কুরবানি করে দিতে হবে। তবে ওই বাচ্চার গোশত নিজে খাবে না, বরং দান করবে। আর যদি বাচ্চাটি কুরবানি না করে কোনো গরিব-মিসকিনকে দান করে, তাও জায়েজ রয়েছে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি-৩/৩৫৪)।

কুরবানির পশু ও তার বয়সঃ

এমন পশু দ্বারা কুরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে; আর তা হলো ছয় ধরনের পশু। সেগুলো হলো- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা।
শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা পূর্ণ এক বছরের হতে হবে। তবে যদি ছয় মাস বয়সের ভেড়া বা দুম্বা মোটাতাজায় এক বছরের মতো মনে হয়, তখন তা দিয়েও কুরবানি করা জায়েজ আছে। কিন্তু ছাগল যতই মোটাতাজা হোক, এক বছরের একদিন কম হলেও তা দিয়ে কুরবানি জায়েজ হবে না।

যেমন হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই মুসিন্না (নির্দিষ্ট বয়সের পশু) কুরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানি করতে পার’। (সহিহ মুসলিম-১৯৬৩)।

যে সমস্ত ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানী করা জায়েয নয়ঃ

ইসলামি বিধান মতে মোট ছয় ধরনের পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়। আর তা হলো-উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এ পশুগুলোকে সুনির্দিষ্ট কিছু দোষ বা খুঁত থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
ক. অন্ধ, কানা বা খোঁড়া জানোয়ার কুরবানী করা দুরস্ত নয়। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১৪৯৭, ১৫০৩, সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২৮০৪, ফাতাওয়া শামী ৫/৩১৬, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৭)

খ. পশু যদি এমন রুগ্ন ও দুর্বল হয় যে, কুরবানীর স্থান পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে পারে না, তাহলে এমন জানোয়ারের কুরবানী জায়েয হবে না। (সুনানে নাসাঈ; হা.নং ৭২১৫, সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১৫০৩, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৭)

গ. জন্তুর কান বা লেজ এক তৃতীয়াংশ বা তার চেয়ে বেশি কেটে গিয়ে থাকলে, তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১৪৯৮, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮)

ঘ. যে পশুর মোটেও দাঁত নেই, কিংবা অধিকাংশ দাঁত পড়ে গেছে, তার দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। যদি অধিকাংশ দাঁত বিদ্যমান থাকে, তাহলে কুরবানী জায়েয হবে। (ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮)

ঙ. যে পশুর শিং উঠেইনি, কিংবা উঠেছিল কিন্তু উপর থেকে ভেঙ্গে গেছে, তার কুরবানী জায়েয। কিন্তু একেবারে মূল থেকে ভেঙে গিয়ে থাকলে, কুরবানী দুরস্ত নয়। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১৫০৪, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৭)

চ. যে জানোয়ারের খুঁজলি বা চর্মরোগ হয়েছে, যদি এর প্রতিক্রিয়া গোশত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে থাকে, তবে কুরবানী দুরস্ত নয়, অন্যথায় দুরস্ত আছে। (আহকামে কুরবানী; পৃষ্ঠা ৩৬)

ছ. যে মাদী জানোয়ারের স্তন নেই, কিংবা স্তন আছে কিন্তু শুকিয়ে গেছে অথবা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ঔষধের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে, তাহলে এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে না। (কিফায়াতুল মুফতী ৮/১৮৯, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮)

কুরবানির পশু জবেহর সময়ঃ

কুরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। কুরবানির পশু জবেহ করার সময় হলো ৩ দিন-জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ। এটাই ওলামায়ে কেরামের কাছে সর্বোত্তম মত হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছে।

এ সময়ের আগে যেমন কুরবানি আদায় হবে না, তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। অবশ্য কাজা হিসাবে আদায় করলে ভিন্ন কথা। যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কুরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে।

যদি ঈদের সালাত আদায়ের আগে কুরবানির পশু জবেহ করা হয়, তাহলে কুরবানি আদায় হবে না। কিন্তু যে স্থানে ঈদের নামাজ বা জুমার নামাজ বৈধ নয় বা ব্যবস্থা নেই, সে স্থানে ১০ জিলহজ ফজর নামাজের পরও কুরবানি করা বৈধ হবে। (কুদুরি) আর কুরবানির শেষ সময় হলো জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা কুরআন হাদিসের আলোকে

কুরবানির পশু হারিয়ে গেলে বিধানঃ 

যদি পশুটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় বা মারা যায়, আর কুরবানিদাতা যদি বিত্তশালী হয় কিংবা তার ওপর পূর্ব থেকেই কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে; তাহলে আরেকটি পশু কুরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হবে। আর যদি সে গরিব হয় (কুরবানি ওয়াজিব না থাকে), তাহলে তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। কুরবানির জন্য নতুন পশু ক্রয়ের পরে যদি হারানো পশুটি পাওয়া যায়, তাহলে কুরবানিদাতা গরিব হলে দুটি পশুই কুরবানি করা ওয়াজিব হবে। আর ধনী হলে যে কোনো একটি কুরবানি করলেই তার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (বাদায়ে সানায়ে-৪/২১৬)।

কুরবানির পশু জবেহ করার নিয়মঃ 

কুরবানির পশু জবেহ করার জন্য রয়েছে কিছু দিকনির্দেশনা। তবে পশু জবেহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্তত নিম্নোক্ত দুটি বিষয়ের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। নতুবা কুরবানির পশু জবেহ বিশুদ্ধ হবে না। বিষয় দুটি হলো- 

১) জবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা। তবে ‘বিসমিল্লাহ’-এর সঙ্গে ‘আল্লাহু আকবার’ যুক্ত করে নেওয়া মুস্তাহাব। ইচ্ছাকৃতভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা পরিত্যাগ করলে জবেহকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলবশত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয়, তবে তা খাওয়া বৈধ। কোনো ব্যক্তি যদি জবেহ করার সময় জবেহকারীর ছুরি চালানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে, তবে তাকেও ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে; নতুবা জবেহ শুদ্ধ হবে না।

২) জবেহ করার সময় কণ্ঠনালি, খাদ্যনালি এবং উভয় পাশের দুটি রগ অর্থাৎ মোট চারটি রগ কাটা জরুরি। কমপক্ষে তিনটি রগ যদি কাটা হয়, তবে কুরবানি বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দুটি রগ কাটা হয়, তখন কুরবানি বিশুদ্ধ হবে না। (হিদায়া)।

কুরবানির গোশতের হুকুমঃ

কুরবানির গোশত কুরবানিদাতা ও তার পরিবারের সদস্যরা খেতে পারবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও’। (সূরা হজ্জ, আয়াত-২৮)।

ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসাবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মুস্তাহাব। কুরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোনো কিছু বিক্রি করা জায়েজ নেই। কারণ তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত বস্তু। তবে চামড়া বিক্রি করা যেতে পারে, কিন্তু টাকা গরিবদের দান করতে হবে। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসাবে কুরবানির গোশত দেওয়া জায়েজ নয়।

যেহেতু সেটিও এক ধরনের বিনিময় যা ক্রয়-বিক্রয়ের মতো। তার পারিশ্রমিক আলাদাভাবে প্রদান করতে হবে। হাদিসে এসেছে-‘আর তা প্রস্তুতকরণে তা থেকে কিছু দেওয়া হবে না’। (সহিহ বুখারি-১৭১৬)। তবে দান বা উপহার হিসাবে কসাইকে কিছু দিলে তা নাজায়েজ হবে না।

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা কুরআন হাদিসের আলোকে

আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কুরবানি আদায়ের ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ খেয়াল রেখে সহীহ নিয়তে সঠিক নিয়মে কুরবানির পশু জবেহ করে একনিষ্ঠতার সঙ্গে গ্রহণযোগ্য কুরবানি আদায়ের তাওফিক দান করুন।  


শেয়ার করুন

Author:

আসসালামু আলাইকুম, আমি মোঃ রহমাতুল্লাহ, ইসলামিক বিষয়াবলী পড়তে ও লিখতে পছন্দ করি। আমার প্রতিটি লেখা কোরআন হাদিসের আলোকে হয়ে থাকে।

0 coment rios: