Showing posts with label পারিবারিক. Show all posts
Showing posts with label পারিবারিক. Show all posts

Monday, December 9, 2024

 স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়

স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়



 স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়




প্রশ্ন: এক বোনের পক্ষ থেকে প্রশ্নঃ

আমার হাজবেন্ড অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়া করে। তার সাথে আমার তেমন শারীরিক সম্পর্কও হয় না। আমার মনে হয়, পরকীয়ার কারণে সে আমার প্রতি আগ্রহী নয়। তবে সে আমাকে খাওয়া-পরা নিয়ে কোনো অভাবে রাখে না। আমার দুটা সন্তান আছে। এই যন্ত্রণা আমার সহ্য হয় না। সে একবার আমার কাছে ধরা পড়ার পর ক্ষমাও চায়। কিন্তু ঐ মেয়ের পাল্লায় পড়ে আবারও তার সাথে সম্পর্ক করে। এই ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?


উত্তর:

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

পরকীয়া নি:সন্দেহে দাম্পত্য জীবন, সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার বিরাট হুমকি। এটি নিজের হালাল স্ত্রীর সাথে আমানতের খেয়ানত, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার শামিল এবং আল্লাহ তাআলার ক্রোধের কারণ। 


যাহোক, কোন স্বামী এই ফিতনায় জড়িয়ে গেলে স্ত্রীর করণীয় হল:


◼ ১. কুরআন-হাদিসের আলোকে তাকে পরকীয়া, অবৈধ প্রেমপ্রীতি ও যিনাব্যাভিচারের ভয়াবহতা, ইসলামী আইন অনুযায়ী দুনিয়াতে এর কঠিন শাস্তি, আখিরাতের আযাব, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝানো। এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসে পর্যাপ্ত ব্ক্তব্য রয়েছে। তাই এ সংক্রান্ত যে কোন ভালো ইসলামী বই বা ইসলামী আলোচনার ভিডিও কাজে লাগানো যেতে পারে।


◼ ২. তার হেদায়েতের জন্য দয়াময় আল্লাহর নিকট দুআ করা। 


◼ ৩. স্ত্রীর মাঝে স্বামীর নিকট অপছন্দীয় কোন আচার-আচরণ থাকলে তা পরিবর্তন করা এবং যথাসাধ্য তাকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা। দাম্পত্য জীবনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক স্বামী-স্ত্রী এ বিষয়ে অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে সময়ের ব্যবধানে তারা দাম্পত্য জীবনের  উষ্ণতা ও আবেদন হারায়। ফলে দুজনের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং অবশেষে ঈমানী দূর্বলতা, কুপ্রবৃত্তির তাড়না এবং শয়তানের কুমন্ত্রণায় তারা ভিন্ন পথ খুঁজা শুরু করে।


◼ ৪. প্রয়োজনে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে ‌আরেকটি বিয়ে করার সম্মতি দেয়া।

 উল্লেখ্য যে, আল্লাহর দেয়া এ বিধানটির ব্যাপারে অনেক স্ত্রীর কঠোর ও ভয়াবহ আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক দুর্বল ঈমানদার স্বামী অবৈধ পথের দিকে পা বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীও এই অন্যায়ের জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচিত হবে।


◼ ৫. সম্ভব হলে সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে পারিবারিক বা সামাজিক সালিশ অথবা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 


◼ ৬. এগুলোর মাধ্যমে কোন উপকার না হলে হয় স্ত্রীকে ধৈর্য ধারণ করে স্বামীকে এ পথ থেকে ফিরানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায় সবশেষে তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে পৃথক হয়ে যেতে হবে।


আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানী)

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Sunday, December 8, 2024

 স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ? কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ? কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

 স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য কুরআন ও হাদিসের আলোকে। 

 স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য কুরআন ও হাদিসের আলোকে। 


স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য 

প্রিয় দীনি ভাই, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।


১. স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা। এক্ষেত্রে টালবাহানা না করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,


وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً


এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। (সূরা নিসা ৪)


২. বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,


أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ


তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ ঘরে তোমরা বাস কর তাদেরকেও সেরূপ ঘরে বাস করতে দেবে। (সূরা তালাক ০৬)


৩. স্বামী যে মানের খায়, স্ত্রীকেও সেই মানের খাওয়ানো এবং স্বামী যে মানের কাপড় পরিধান করে স্ত্রীকেও সে মানের কাপড়চোপড় দয়া। হাদিস শরিফে এসেছে, মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী রাযি. বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট এসে বললাম, আমাদের স্ত্রীদের (হক) সম্পর্কে আপনি কি বলেন? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন,


أطعِمُوهن ممَّا تأكلونَ، واكسوهنَّ ممَّا تكتَسُونَ، ولا تَضرِبوهنَّ ولا تُقَبِّحوهنَّ


তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তা পরিধান করাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না। (আবু দাউদ ২১৪৪)


৪. স্ত্রীর সামনে নিজেকে পরিপাটি রাখা। কেননা, পুরুষরা তাদের সঙ্গিনীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। ঠিক একইভাবে তারা তাদের সঙ্গীকেও সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. বলতেন,


إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَتَزَيَّنَ لِلْمَرْأَةِ ، كَمَا أُحِبُّ أَنْ تَتَزَيَّنَ لِي الْمَرْأَةُ ، لِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ : { وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ } ، وَمَا أُحِبُّ أَنْ أَسْتَنْظِفَ جَمِيعَ حَقِّي عَلَيْهَا ، لِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ : { وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ }


আমি আমার স্ত্রীর জন্য পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন পছন্দ করি আমার স্ত্রী আমার জন্য পরিপাটি থাকাকে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর, নিয়ম অনুযায়ী।’ আর আমি আমার অধিকার স্ত্রীর কাছ থেকে কড়ায়গণ্ডায় আদায় করে নেয়া পছন্দ করি না। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ১৫৭১২)


তবে উক্ত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উভয়কেই হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।


৫. স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচারণ কর। (সূরা নিসা ১৯)


৬. স্ত্রীর প্রতি সব সময় আন্তরিক থাকা এবং তার ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


واسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا؛ فإنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِن ضِلَعٍ، وإنَّ أعْوَجَ شَيءٍ في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فإنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وإنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أعْوَجَ، فاسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا


তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তুমি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর যদি তুমি তা যেভাবে আছে সে ভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের সাথে কল্যাণমূলক কাজ করার উপদেশ গ্রহণ কর। (বুখারী ৫১৮৫)


উক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায়, নারীর মধ্যে বক্রতার বিষয়টি মৌলিকভাবেই সৃষ্টিগত; অতএব, আবশ্যক হলো সহজসুলভ আচরণ করা এবং ধৈর্য ধারণ করা।


৭. স্ত্রীর বিশেষ চাহিদা পূরণ করার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। আল মাউসুয়া’তুল ফিকহিয়্যা (৩০/১২৭)-তে এসেছে,


 من حقّ الزّوجة على زوجها أن يقوم بإعفافها ، وذلك بأن يطأها ، وقد ذهب جمهور الفقهاء – الحنفيّة والمالكيّة والحنابلة – إلى أنّه يجب على الزّوج أن يطأ زوجته


‘স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল, স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের মাধ্যমে তার পবিত্র জীবন যাপনের প্রতি যত্নশীল হবে। হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অধিকাংশ ফকিহর মতে স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া স্বামীর জন্য ওয়াজিব।’


৮. স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা। হাদিস শরিফে এসেছে, আসওয়াদ রাযি. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে তাঁর স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন তা জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন,


كانَ يَكونُ في مِهْنَةِ أهْلِهِ – تَعْنِي خِدْمَةَ أهْلِهِ – فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ خَرَجَ إلى الصَّلَاةِ


রাসূলুল্লাহ ﷺ স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাযের সময় হতো তখন তিনি নামাযে যেতেন। (বুখারী ৬৭৬)


৯. স্ত্রীর ধর্ম, দেহ, যৌবন ও মর্যাদায় ঈর্ষাবান ও আত্মমর্যাদাবোধ-সম্পন্ন হওয়া এবং এ সবে কোন প্রকার কলঙ্ক লাগতে না দেওয়া। কেননা,  স্ত্রী উত্তম সংরক্ষণীয় ও হিফাজতের জিনিস। লোকের মুখে-মুখে, পরপুরুষদের চোখে-চোখে ও যুবকদের মনে-মনে বিচরণ করতে না দেওয়া; যাকে দেখা দেওয়া তার স্ত্রীর পক্ষে হারাম তাকে সাধারণ অনুমতি দিয়ে বাড়ি আসতে-যেতে না দেওয়া সুপুরুষের কর্ম এবং স্ত্রীর অধিকার। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


إنَّ اللَّهَ يَغَارُ، وإنَّ المُؤْمِنَ يَغَارُ، وَغَيْرَةُ اللهِ أَنْ يَأْتِيَ المُؤْمِنُ ما حَرَّمَ عليه


আল্লাহ তায়আলা তার আত্নমর্যাদাবোধ প্রকাশ করেন এবং মুমিনগণও আত্নমর্যাদাবোধ প্রকাশ করে। আল্লাহর আত্নমর্যাদাবোধ উজ্জীবিত হয় যখন মুমিন তা করে যা তিনি হারাম করেছেন। (মুসলিম ২৭৬১)


অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


اَلدَّيُّوْثُ هُوَ الَّذِيْ لَا يُبَالِيْ مَنْ دَخَلَ عَلٰى أَهْلِهِ


দাইয়ুস হলো সে ব্যক্তি যে, তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করে না। (তাবরানি ১৩১৮০ আততারগিব ওয়াততারহিব ৩৪৭৬)


১০. স্ত্রীকে দ্বীনদারি শিক্ষা দেওয়া। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,


يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلْحِجَارَةُ


হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর…। (সূরা তাহরীম ০৬)


১১. স্ত্রীর পরিবার ও বান্ধবীদের প্রতি বদান্যতা ও সুন্দর আচরণ দেখানো। আয়েশা রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন,


أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ


এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। (মুসলিম ২৪৩৫)


১২. ইসলামী শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে স্ত্রীর মন জয় করা। রাসুলুল্লাহ ﷺ আপন স্ত্রীদের সঙ্গে বিনোদনমূলক আচরণ করেছেন। যেমন, হাদিস শরিফে এসেছে, আয়েশা রাযি. এক সফরে রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তার আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর (অন্য আরেক সফরে) তাঁর সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পেছনে ফেলে দিয়ে বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, هَذِهِ بِتِلْكَ এ বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ ২৫৭৮)


১৩. স্ত্রীর গোপন বিষয় বিশেষ করে মিলনসংক্রান্ত বিষয়গুলো কাউকে না জানানো। হাদিস শরিফে এসেছে, আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাযি. বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে ছিলাম, আর তাঁর সেখানে অনেক পুরুষ ও মহিলাও বসেছিল। তিনি বললেন, সম্ভবতঃ কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীর সাথে যা করে তা (অপরের কাছে) বলে থাকে এবং সম্ভবতঃ কোন মহিলা নিজ স্বামীর সাথে যা করে তা (অপরের নিকট) বলে থাকে? এ কথা শুনে মজলিসের সবাই কোন উত্তর না দিয়ে চুপ থেকে গেল। আমি বললাম, ’জী হ্যাঁ। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! মহিলারা তা বলে থাকে এবং পুরুষরাও তা বলে থাকে।’ অতঃপর তিনি বললেন,


فَلَا تَفْعَلُوا فَإِنَّمَا مِثْلُ ذَلِكَ مِثْلُ الشَّيْطَانُ لَقِيَ شَيْطَانَةً فِي طَرِيقٍ فَغَشِيَهَا وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ


তোমরা এরূপ করো না। যেহেতু এমন ব্যক্তি তো সেই শয়তানের মত, যে কোন নারী-শয়তানকে রাস্তায় পেয়ে সঙ্গম করতে লাগে, আর লোকেরা তার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে। (আবু দাউদ ২১৩৩)


১৪. একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ


যার দু’জন স্ত্রী আছে আর সে তার মধ্যে একজনের প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়ে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধাঙ্গ অবস্থায় আসবে। (আহমাদ ২৭৫৮৩)


১৫. শাসন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


اتَّقُوا اللَّهَ في النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ ذلك فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غير مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ


তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে স্থান না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছেদের হুকুম রয়েছে। (মুসলিম ১২১৮)


১৬. আল্লাহর কাছে দোয়া করা। কীভাবে দোয়া করতে হবে আল্লাহ আমাদের তা শিখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,


رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍۢ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا


‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো (সূরা ফুরকান ৭৪)


আল্লাহ তাওফীকদাতা।


والله أعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন

শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী


Wednesday, June 5, 2024

ইসলামে পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

ইসলামে পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

 



নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে একটি পরিবার। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবার হচ্ছে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট বা শাখা। পরিবারের জন্ম তথা উৎপত্তি বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে সামাজিক জীবনের প্রাথমিক বুনিয়াদ বৈবাহিক সম্পর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই জন্য ইসলাম সমাজে বিবাহ প্রথাকে সহজতর করে দিয়েছে। কতিপয় নিকটাত্মীয় এবং পৌত্তলিক নারী ব্যতীত সকলের সাথে বিবাহ বন্ধনকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অতঃপর পারিবারিক জীবনে যদি কোন প্রকার বিঘ্নের সৃষ্টি হয়, যাতে কোন অবস্থাতে ঐক্যবিধান সম্ভব হয়ে না ওঠে, তাহলে পুরুষের জন্য তালাক এবং স্ত্রীর জন্য ‘খোলা’র (দেনমোহর মাফ করে দেয়া বা অন্য কোন অর্থ বা সম্পদ দানের মাধ্যমে স্বামীর  নিকট তালাক গ্রহণ)  অধিকার ইসলামে স্বীকৃত রয়েছে। এ ভাবেই ইসলাম নারী-পুরুষের অধিকারকে সংরক্ষণ করেছে। ইসলাম পবিত্র বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে সামাজিক পবিত্রতা রক্ষার যে সুন্দরতম বিধান দিয়েছে তার ব্যতিক্রমে সামাজিক পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হওয়া স্বাভাবিক। তাই সে এ পন্থায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ফলে উদ্ভূত সমস্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছে এবং বিবাহ পদ্ধতিকেও সহজ করে দিয়েছে। এমনকি এক স্ত্রীতে যদি কারও বাস্তব অসুবিধা থাকে সেক্ষেত্রে তাকে একাধিক স্ত্রী গ্রহণেরও অনুমতি দিয়েছে। তবুও যদি কেউ শরীয়তের নিয়ন্ত্রণসীমা অতিক্রম করে অবৈধ যৌন সম্ভোগে লিপ্ত হয় তাহলে তার জন্য কঠিনতম শাস্তির ব্যবস্থা ইসলামে রয়েছে। ইসলামী শরীয়ত এরূপ অপরাধীর জন্য কশাঘাত এবং প্রস্তর আঘাতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়েছে।


পারিবারিক জীবন এবং নারী-পুরুষের দায়িত্ব


পারিবারিক জীবন এবং নারী-পুরুষের কর্মসীমা ও দায়িত্ব সম্পর্কে ইসলাম বিশেষ কতগুলো পথনির্দেশ প্রদান করেছে। নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত দিকগুলো আলোচনা করা হলো:


ক. আল্লাহ্ পুরুষকে পরিবার তথা সংসারের অভিভাবক করে সৃষ্টি করেছে। শুধু তা-ই নয়, অর্থোপার্জন এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের গুরুদায়িত্বও অর্পিত হয়েছে পুরুষের ওপর। মহান আল্লাহ বলছেন:


﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَآ أَنْفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ﴾


"পুরুষরা নারীদের ওপর দায়িত্বশীল (কর্তৃত্বের অধিকারী) এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের কতককে (পুরুষকে) কতকের (নারীর) ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন  এবং যেহেতু তারা (নারীদের জন্য) তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে থাকে।” (নিসা: ৩৪)


আলোচ্য আয়াতে পরিবারের গণ্ডিতে নারীদের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব যে পুরুষের তার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আয়াতে পরিবারে নারীদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্ব ও অভিভাবকত্বের বিষয়টি নারী-পুরুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তবে পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বের দিককে পরিবারের গণ্ডির বাইরে সকল ক্ষেত্রে (জ্ঞান, চরিত্র, কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা) সার্বিক ভাবার কোন অবকাশ নেই এবং কখনই তা সার্বিকভাবে সকল নারীর ওপর সকল পুরুষের সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলছে না। কারণ, পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে শ্রেষ্ঠত্বের যে ক্ষেত্রগুলো বর্ণিত হয়েছে তা নারী-পুরুষ সকলের জন্য অর্জনযোগ্য বলেছে এবং হযরত মারইয়াম (আ.), হযরত আছিয়ার মত নারীদের পুরুষদের জন্যও আদর্শ গণ্য করেছে (সূরা তাহরীম: ১১ ও ১২)। তাছাড়া অনেক নারীই প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে পুরুষদের ছাড়িয়ে যেতে পারে বা প্রকৃতিগতভাবেই অধিকতর যোগ্যতার অধিকারী হতে পারে। কিন্তু তার এ যোগ্যতা সত্ত্বেও পরিবারের দায়িত্বশীল পুরুষই থাকবে।


অপর পক্ষে নারীর ওপর অর্পিত হয়েছে ঘরকন্না, শিশুপালন, শিশুর শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাংসারিক দায়িত্ব। মহানবি (সা.) বলেছেন: নারী তার স্বামীর গৃহের কর্ত্রী হিসাবে তার স্বামী ও সন্তানদের দায়িত্বশীল (বুখারী, হাদিস নং ৭১৩৮ ও মুসলিম, হাদিস নং ১৮২৯) অপর এক হাদিসে এসেছে যে, এক নারী মহানবি (সা.) এর নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল,  আমার এমন একটি প্রশ্ন আছে যা কিয়ামত পর্যন্ত সকল নারীর প্রশ্ন আর তা হল: কেন ইসলাম পুরুষ ও নারীর মধ্যে সওয়াবের ক্ষেত্রে পার্থক্য করেছে? কেননা অনেক কাজ আছে যাতে পুরুষরা সওয়াব লাভ করে কিন্তু নারীরা তা থেকে বঞ্চিত যেমন জিহাদ ও সীমান্তরক্ষা…।’ মহানবি (সা.) বললেন: নারীর জন্য জিহাদ ও সংগ্রাম হল উত্তম পরিবার ব্যবস্থাপনা।


হযরত আলীও বলেছেন: আল্লাহ পুরুষ ও নারী উভয়ের ওপরই জিহাদ ফরয করেছেন। তবে পুরুষের জন্য জিহাদ হল জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা ও নিহত হওয়া; কিন্তু নারীর জন্য জিহাদ হল উত্তমরূপে সংসার পরিচালনা করা। (ওয়াসায়িলুশ শিয়া, ১১তম খণ্ড, পৃ.১৫)


হযরত আলী নারীদের প্রকৃতি সম্পর্কে বলেছেন: নারীদের ওপর তার সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দিও না। কেননা, তারা বসন্তের ফুলের ন্যায়, বলবান বীর নয়। (নাহজুল বালাগা, ৩১ নং পত্র)


ইসলাম নারীর ওপর পর্দার নির্দেশ জারি করেছে এবং তাকে সংসারের অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব


লনে উদ্বুদ্ধ করেছে। এ ছাড়া ইসলাম স্বাভাবিক অবস্থায় নারীকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে, নিষেধ করেছে তার অলংকার ও রূপ সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করতে। হ্যাঁ, বিশেষ প্রয়োজনবশত বাইরে যেতে হলেও পর্দা রক্ষা করে যেতে বলা হয়েছে:


﴿وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُولَىٰ﴾


‘নিজ নিজ ঘরে অবস্থান কর। অন্ধকার যুগের নারীরা যেভাবে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বাইরে ঘোরাফেরা করত তদ্রূপ কর না।’ (আহযাব: ৩৩)


খ. নারী-পুরুষ তথা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ককে অত্যন্ত পবিত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর এই পারস্পরিক সম্পর্ককে উন্নত ও নিবিড় করার জন্য কুরআন মানব-মানবীকে উদ্বুদ্ধ করেছে। উভয়কে উভয়ের প্রতি আন্তরিকতা এবং সহানুভূতিশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কুরআনের ভাষায়:


﴿...هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ...﴾


‘তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছদস্বরূপ...।’ (বাকারা: ১৮৭)


﴿وَمِنْ آيَاتِهِ اَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ اَنفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً﴾


‘আল্লাহর বহুবিধ নিদর্শনের মধ্যে এও একটি নিদর্শন যে, তিনি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্য নারী (স্ত্রী) সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্য, তোমরা তাদের দ্বারা আনন্দ ও শান্তি লাভ করবে। বস্তুত আল্লাহ্ তোমাদের পরস্পরের মধ্যে প্রেম ও সহানুভূতির উদ্রেক করেছেন।’ (রূম: ২১)


বলাবাহুল্য স্বামী-স্ত্রী উভয় উভয়ের জন্য শান্তির আধার।


গ. নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্কের উদ্দেশ্য শুধু আনন্দ উপভোগ, যৌন সম্ভোগ এবং আত্মতৃপ্তি লাভ করাই নয়, স্বয়ং একে ইসলামী শরীয়া একটি তামাদ্দুনিক/সাংস্কৃতিক ও নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলেই গণ্য করেছে। এর মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের বংশধারা সংরক্ষণ। এই উদ্দেশ্য ঠিক তখনই ফলপ্রসূ হতে পারে, যখন নারীসমাজ একমাত্র সন্তান জন্ম দেওয়াকেই যথেষ্ট মনে না করে; বরং সন্তান জন্ম দেওয়ার সাথে সাথে তার শিক্ষা-দীক্ষা এবং প্রতিপালনের সুষ্ঠু দায়িত্বও নারীকে পালন করতে হবে। এ কারণেই কুরআনে নারীকে (মানব বংশ উৎপাদনের) ‘ক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি বিশেষ প্রক্রিয়া ও কর্মপ্রণালীর মাধ্যমে ক্ষেত থেকে যেমন ফসল উৎপন্ন হয়, তেমনিভাবে নারী জাতির ক্রোড় থেকেও আদম সন্তানকে উপযুক্তভাবে তৈরি হয়ে সমাজে পদার্পণ করা উচিত।


ঘ. ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের ওপর নির্ভরশীল। একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে স্ত্রীদের মধ্যে যাবতীয় দিক দিয়ে সমভাবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসলাম পুরুষদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে বিশেষ কারও প্রতি ঝুঁকে পড়তে নিষেধ করেছে। আদেশ করা হয়েছে ভারসাম্য রক্ষার জন্য।


﴿...فَلاَ تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلْمُعَلَّقَةِ...﴾


‘...তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড় না এবং অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রেখ না।...’ (নিসা: ১২৯)


স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনকি এটা এক পর্যায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদেরও কারণ হয়ে যেতে পারে। যদি এই রূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তবে তা ভব্যজনোচিত এবং পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই হতে হবে। এমনকি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে যা ইতঃপূর্বে দেওয়া হয়েছিল তা ফিরিয়ে নিতে নিষেধ করা হয়েছে।


﴿وَإِنْ أَرَدْتُّمُ ٱسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَاراً فَلاَ تَأْخُذُواْ مِنْهُ شَيْئاً أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَاناً وَإِثْماً مُّبِيناً﴾


‘যদি তোমরা এক স্ত্রীর (তালাক দিয়ে তার) স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং তাদের (স্ত্রীদের) একজনকে অনেক ধন-সম্পদও দিয়ে থাক, তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না।’ (নিসা: ২১) বরং আরও অতিরিক্ত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে:


﴿...فَمَتِّعُوهُنَّ وَسَرِّحُوهُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا﴾


‘...তাদেরকে আরও কিছু মালসামগ্রী প্রদান করে সুন্দর তথা ভদ্রভাবে বিদায় দাও।’ (আহযাব: ৪৯)


পরিবারে মাতা-পিতা ও সন্তানদের পারস্পরিক সম্পর্ক


স্বামী-স্ত্রীর কর্মক্ষেত্র ও কর্মসীমা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের সুষ্ঠু পদ্ধতিসমূহ বর্ণনা করার পর মাতা-পিতা ও ছেলে-মেয়েদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। পিতা-মাতার সাথে ছেলে-মেয়েদের কীরূপ সম্পর্ক এবং ব্যবহার হওয়া উচিত এ ব্যাপারে কুরআনের সুস্পষ্ট এবং ব্যাপক শিক্ষা রয়েছে। বলা হয়েছে যে, তাদের (মাতাপিতাকে) ‘উহ্’ করার মতো কষ্টদায়ক কথাও যেন বল না।  অর্থাৎ তোমাদের কথা এবং কাজে এমন কিছু কর না যা তাদের জন্য মনোকষ্টের কারণ হতে পারে। কুরআনের নির্দেশ হচ্ছে:


﴿وَٱخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيراً﴾


‘তাদের সামনে ভালবাসার সাথে নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল: হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (বনি ইসরাঈল: ২৪)


এ ছাড়া পিতা-মাতা যতক্ষণ


ইসলামী শিক্ষা ও মূলনীতির স্পষ্ট বিরোধী কোন নির্দেশ না দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আদেশ অমান্য করা যাবে না। অর্থাৎ ইসলামী শিক্ষা ও মূলনীতির স্পষ্ট পরিপন্থী কোন নির্দেশ পিতা-মাতা কর্তৃক ছেলে-মেয়েদের ওপর আরোপিত হলে তা পরিত্যাজ্য। অপর পক্ষে ছেলে-মেয়েদের সৎ ও উপযুক্ত নাগরিকরূপে গড়ে তোলার জন্য পিতা-মাতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলাম অন্ধকার যুগের অনুসরণে খাদ্যাভাব এবং দারিদ্র্যের ভয়ে শিশু তথা সন্তান-সন্ততিকে হত্যা করতে নিষেধ করেছে। এরূপ কর্মকে অমার্জনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পিতা-মাতার অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে তাদের ছেলেমেয়েদের ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া এবং অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখা।


হযরত ইসমাইল (আ.)-এর আলোচনা প্রসঙ্গে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (ইসমাইল) তাঁর পরিবারবর্গকে নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদান করার নির্দেশ দিতেন। (মারইয়াম: ৫৫)


এছাড়া কুরআন মুমিনদেরকে তাদের পরিবারের উদ্দেশ্যে একটি সুন্দরতম দো‘আ শিক্ষা দিয়েছে। দো‘আটি এই:


﴿وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ اِمَامًا﴾


‘...হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রীবর্গ ও সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে আমাদের চক্ষুসমূহের উজ্জ্বলতা দান কর এবং আমাদের মুত্তাকী তথা খোদাপরায়ণ লোকদের ইমাম নিযুক্ত কর।’ (ফুরকান: ৭৪)


আলোচ্য আয়াতে ‘মুত্তাকী’ অর্থে তাফসীরকারগণ পরিবারভুক্ত লোকদের বোঝাতে চেয়েছেন।


পরিবার সংগঠনের পর ইসলাম আত্মীয়বর্গের সাথে সৌহার্দ্র্য প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে কোন তারতম্য করা হয়নি; বরং সকলই এর মধ্যে শামিল রয়েছে। ইসলামের উপস্থাপিত এই মূলনীতি ও নির্দেশ অনুযায়ী রক্ত অথবা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে একটি দৃঢ়বন্ধন এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে। একই পরিবারভুক্ত লোকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য পরস্পরকে সহানুভূতিশীল এবং দয়াদ্রচিত্ত হওয়ার তাকিদ দেওয়া হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে নিকট আত্মীয়ের হক অধিক। তাই নিকটাত্মীয়ের সাথে সমধিক সৌহার্দ্র্য রক্ষা করার জন্য কুরআনে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।


﴿...وَبِٱلْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَذِى ٱلْقُرْبَىٰ...﴾


‘...পিতা-মাতা এবং নিকট আত্মীয়দের সাথে ইহসান কর...।’ (বাকারা: ৮৩)


সন্তানদের শিষ্টাচার শিক্ষা


﴿وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ٭وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ﴾


‘যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল: হে বৎস! আল্লাহর সাথে শরীক কর না, কেননা শিরক হল মহা অন্যায়। আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, অবশেষে আমারই দিকে ফিরে আসতে হবে। আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ (লুকমান: ১৩-১৪)


ইমাম সাজ্জাদ (আ.) পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অধিকার সম্পর্কে বলেছেন:


‘আর তোমার সন্তানের অধিকার হলো এটা জানবে যে, সে তোমার থেকেই এবং এই দুনিয়ায় তোমার সাথেই সম্পর্কযুক্ত, ভালো হোক আর চাই মন্দ হোক। তোমার উপরই তার পৃষ্ঠপোষকতার ভার। তাকে ভালভাবে প্রতিপালন এবং তার মহাপ্রতিপালকের প্রতি নির্দেশনা দানের মাধ্যমে এবং তাকে তোমার ব্যাপারে ও তাঁর নিজের ব্যাপারে আনুগত্যের ক্ষেত্রে সাহায্য করার মাধ্যমে তুমি সওয়াব লাভ করবে। আর অবহেলা করলে শাস্তি পাবে। কাজেই তার জন্য এমন কোন কাজ করো যাতে অস্থায়ী এ দুনিয়ায় তার সুফল পায়, আর তোমার ও তার মধ্যে সম্পর্ককে শোভামণ্ডিত কর, যাতে প্রতিপালকের কাছে তাকে উত্তমরূপে পৃষ্ঠপোষকতা এবং তার থেকে যে খোদায়ী ফল লাভ করেছ তার কারণে ক্ষমার পাত্র হতে পারো।’


সুতরাং ইসলাম পরিবারকে উত্তম সমাজের ভিত্তি বলে গণ্য করেছে এবং একে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিধানও বর্ণনা করেছে। সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পারিবারিক জীবনে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রগুলোকে আলাদা করেছে। ইসলামের পরিবার ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়কে তার আত্মিক অবস্থানুযায়ী দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। তারা একে অপরের পরিপূরক। তারা স্ব স্ব স্থানে তাদের দায়িত্ব পালন করলেই কেবল একটি পরিপূর্ণ ও আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব



পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে ইসলামের বাণী  ছড়িয়ে দিতে আপনি ও সহযোগী হউন

Tuesday, June 4, 2024

কোরান ও হাদিসের আলোকে পিতা-মাতার মর্যদা

কোরান ও হাদিসের আলোকে পিতা-মাতার মর্যদা

 



কোরান ও হাদিসের আলোকে পিতার মর্যদা

রোদ্রের  সময় ছায়া, বৃষ্টির সময় ছাতা , হোঁচট খাওয়ার সময় হাত ধরে হাটতে শিখানো আর যিনি মনে হাজার টেনশন নিয়েও সন্তানকে দেখে হাসি মুখে সে শুধু একজন 'আব্বু '। হ্যাঁ তিনিই সব দুঃখ কষ্ট ভুলে হাসি দেখায়। পরিবারের জন্য রোজকার করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরা, পরিবারের তরে বিদেশে থাকা সবই পারেন তিনি সে মোদের সবার আব্বুজান। তাদের প্রতি সুব্যাবহারে নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও তার প্রিয় রাসূল সা:।


কুরআন ও হাদিসে পিতার মর্যাদাকে অত্যন্ত সম্মানিত করা হয়েছে এবং তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে পিতার গুরুত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরার জন্য এখানে কিছু মূল বিষয় রয়েছে:


সম্মান এবং উদারতা:


কুরআন বিশ্বাসীদেরকে তাদের পিতামাতার প্রতি দয়া, সম্মান এবং আনুগত্য দেখানোর নির্দেশ দেয়, যার মধ্যে মা এবং পিতা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। বেশ কয়েকটি আয়াতে, আল্লাহ পিতামাতার সাথে সুব্যবহার এবং তাদের অধিকার পূরণের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, সূরা আল-ইসরা-এ আল্লাহ বলেন, "এবং আঁপনার রব নির্দেশ দিলেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না, আর তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল।" (কুরআন ১৭:২৩)


পিতার নির্দেশনার গুরুত্ব:


পিতাদের পরিবারের মধ্যে নেতা এবং গাইড হিসাবে দেখা হয়। তারা তাদের সন্তানদের নির্দেশিকা, সমর্থন এবং সুরক্ষা প্রদানের জন্য দায়ী


পিতা-মাতার করুণা:


ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে পিতা-মাতার, বিশেষ করে পিতার করুণার মধ্যে আল্লাহর রহমত প্রকাশ পায়। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, "আল্লাহর রহমত তাদের উপর যারা অন্যদের প্রতি দয়া করে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া কর, আসমানের উপরে যিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন" (আবু দাউদ)। পিতারা তাদের সন্তানদের প্রতি সহানুভূতি, ভালবাসা এবং করুণা প্রদর্শন করবেন বলে আশা করা হয়।


উত্তরাধিকার এবং আর্থিক দায়বদ্ধতা:


উত্তরাধিকার সম্পর্কিত ইসলামের সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে এবং পিতাদের তাদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তরাধিকার বণ্টনে একটি সংজ্ঞায়িত ভূমিকা রয়েছে। এটি তাদের আর্থিক দায়বদ্ধতা এবং তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণের গুরুত্ব প্রদর্শন করে।


তাঁরা আমাদের বেহেশত ও দোযখ:


(عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا؟ قَالَ: همَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ. (رواه ابن ماجه


“হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কি আছে? তিনি বললেন, তারা তোমার বেহেশত ও দোযখ” (ইবনে মাজাহ-৪৯৪১)।


হাদিসটির মূল কথা হচ্ছে, সন্তান পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করলে বেহেশতের অধিকারী হবে এবং পিতা-মাতার অধিকারসমূহকে পদদলিত করলে, পিতা-মাতার চেয়ে অন্য কোন মানুষকে, আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দিলে দোযখের অধিকারী হবে।


আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কালামে বলেছেন,‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আঁমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই। তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আঁমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আঁমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আঁমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবগত করব’। [সূরা লোকমান,আয়াত নং ১৫]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসসমূহ পিতামাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বহু মূল্যবাণ উপদেশ বাণী সবিস্তারে বিবরণ প্রদান করেছে। তাতে পিতামাতার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে পুরষ্কার এবং তাঁদের অবাধ্য হলে শাস্তির বর্ণনাও প্রদান করেছে। নিচে কিছু সংশ্লিষ্ট হাদিস পেশ করা হল:


عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ إِلَى وَالِدَتِهِ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَانَ لَهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْهَا كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: ” نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ  “رواه أبو بكر الإسماعيلي في “معجم أسامي الشيوخ ”) – ومن طريقه البيهقي في “شعب الإيمان .


হযরত আব্দুল্লাহ বিন আববাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, হুজুর  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে নেক্কার ছেলে নিজ মাতা-পিতার প্রতি রহমত ও আন্তরিকতার দৃষ্টিতে একবার তাকাবে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে তার জন্য একটি মাবরুর হজ্বের (মকবুল হজ্বের) সাওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন। সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি উক্ত ব্যক্তি দৈনন্দিন একশত বার তাকায়, তাহলে? তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ! আল্লাহ তায়ালা সুমহান ও বড় করুণাময়।(বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান ১০/২৬৫)


আয়ু ও রিযক বৃদ্ধি পায়:


عَنْ ثَوْبَانَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” لَا يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبِرُّ ، وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِخَطِيئَةٍ يَعْمَلُهَا


হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, দোয়া ব্যতিত অন্য কিছুই ভাগ্যকে বদলাতে পারে না এবং পিতামাতার প্রতি সদাচার ব্যতিত অন্য কিছুই আয়ুকে প্রলম্বিত করতে পারে না। কোন ব্যক্তি তার পাপের কারণে তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ-৮৭)


পিতৃ দিবসের পালনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :


১৯০৮ সালে, গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খনির দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্মান করার জন্য এই দিনটির প্রস্তাব করেছিলেন। যদিও তখন এটি গৃহীত হয়নি, ১৯০৯ সালে সোনোরা স্মার্ট ডড, যিনি তার পাঁচ ভাইয়ের সাথে একা তার বাবার দ্বারা বড় হয়েছিলেন, একটি গির্জায় মা দিবসে যোগ দেওয়ার পর, স্পোকেন মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনকে বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস উদযাপন করতে রাজি করান।


বর্তমান যুগে মা বাবার সাথে ইসলাম বিরোধী আচার আচরণ করা হয়।যে মা বাবা ছোটতে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে তাদেরই ঘর ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছে। তাদের আর ঠাই নেই তাদের নিজের ভিটেতে বরং যেতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। হায়রে দুনিয়ার মূর্খ লোক কবে তোদের আসবে ফিরে হোশ। মনে কর সেই দিনের কথা যখন পিঠে করে নিয়ে যেত তোর বাবা।  জিজ্ঞেস করে দেখ কত দিন খেতে পাইনি মন ভোরে ভেবে তোদের কথা।  খবর নিয়ে দেখ কত দিন বিদেশে আছে কোন হালে। আসবে কি তোর চোখে জল তাঁর দুঃখের কাহিনী শুনে ?


পোষ্টটি শেয়ার করে ইসলামের বাণী প্রচারে আপনিও সহয়াতা করুন।