Showing posts with label মাসয়ালা. Show all posts
Showing posts with label মাসয়ালা. Show all posts

Saturday, May 18, 2024

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ ও ফরজ গোসল সম্পন্ন করার সর্বোত্তম নিয়ম জেনে নিন।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ ও ফরজ গোসল সম্পন্ন করার সর্বোত্তম নিয়ম জেনে নিন।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ



গোসল কাকে বলেঃ

ইসলামের পরিভাষায়, গোসল হল সমস্ত দেহ ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। কতিপয় ধর্মীয় উপাসনা এবং আচার-আনুষ্ঠান পালনের পূর্বশর্ত হচ্ছে গোসল।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণঃ


অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক যে গোসল করতে হয় তাই ফরজ গোসল। তিনটি অবস্থায় এ গোসল ফরজ হয়। এ অবস্থায় গোসল না করলে অপবিত্র থাকতে হয়। তাহলো-

১. স্বপ্নদোষ হলে।

ঘুম কিংবা জেগে থাকা অবস্থায় শারীরিক উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হলে ওই ব্যক্তির ওপর গোসল করা ফরজ। গোসল না করা পর্যন্ত সে অপবিত্র থাকবে।

তবে ঘুমে থাকা অবস্থায় উত্তেজনা অনুভব না হলেও গোসল ফরজ। কারণ অনেক সময় ঘুমে স্বপ্নদোষ হলে টের পাওয়া যায় না। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর যদি কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখা যায় আর সেক্ষেত্রে স্বপ্ন দোষের কথা স্মরণ থাকুক আর না থাকুক এ অবস্থায়ও গোসল করা ফরজ। (হেদায়া)

২. স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করলে।

সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর গোসল করা ফরজ। স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর গোপনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে। তাতে বীর্যপাত হোক আর না হোক; উভয়কে গোসল করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

৩. স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করলে

সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর গোসল করা ফরজ। স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর গোপনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে। তাতে বীর্যপাত হোক আর না হোক; উভয়কে গোসল করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সঙ্গত হলে (সহবাস করলে), তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারি)

৪. হায়েজ-নেফাস থেকে মুক্ত হলে।

নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়েজ) বন্ধ হলে এবং সন্তান প্রসব করার পর রক্ত (নেফাস) বন্ধ হলে পবিত্রতার নিয়তে গোসল করা ফরজ। যতদিন রক্ত বন্ধ না হবে ততদিন ওই নারী অপবিত্র থাকবে।

মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে নারী-পুরুষের যৌনমিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাতের মাধ্যমে কিংবা হাফেজ-নেফাসের কারণে অপবিত্র হলে তাকে পবিত্রতা হওয়ার নির্দেশ দেন এভাবে-

وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ

‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)

৫. গোসল ফরয হওয়ার পঞ্চম কারণ 'মৃত্যু'
কোন মুসলমান ব্যক্তি মারা গেলে তাকে গোসল দেওয়া জীবিতদের উপর ফরয। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘তাকে বরই পাতামিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও। (বুখারী: ১২৬৬)। তবে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হয় তাদের জন্য গোসল ফরয নয়।

 ফরজ গোসল সম্পন্ন করার সর্বোত্তম নিয়ম হলোঃ 


১. বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم) বলে গোসল শুরু করা। তবে গোসলখানা ও টয়লেট একসঙ্গে থাকলে বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ করে বলা যাবে না।

২. হাত ধোয়া। অর্থাৎ উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।

৩. লজ্জাস্থান ধোয়া। বাম হাতে পানি দ্বারা লজ্জাস্থান পরিস্কার করা। সম্ভব হলে ইস্তিঞ্জা তথা পেশাব করে নেওয়া। এতে নাকাপি সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে।

৪. নাপাকি ধোয়া। কাপড়ে বা শরীরের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া।

৫. ওজু করা। পা ধোয়া ছাড়া নামাজের অজুর ন্যয় অজু করে নেওয়া।

৬. অতঃপর ফরজ গোসলের তিন কাজ- কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে।

৭. পা ধোয়া। সবশেষে গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ গোসল করার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখার এবং যথাযথভাবে গোসল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।



Thursday, May 16, 2024

অজু করার দোয়া ও অযুর ফরজ গুলো জেনে নিন।

অজু করার দোয়া ও অযুর ফরজ গুলো জেনে নিন।

অজু করার দোয়া ও অযুর ফরজ গুলো জেনে নিন।

 


অজু কাকে বলে? 

অজু পবিত্রতা অর্জন ও নামাজ আদায়ের মাধ্যম। হাদিসে অজুকে নামাজের চাবি আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অজুর আভিধানিক অর্থ- সৌন্দর্য, পরিষ্কার ও স্বচ্ছতা। শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে নির্দিষ্ট অঙ্গসমূহে বিশেষ নিয়মে পানি ব্যবহার করাকে অজু বলে। অজুর বিধান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমাদের মুখ ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং মাথা মাসেহ করবে আর পা টাখনু (গ্রন্থি) পর্যন্ত ধৌত করবে...।’ (সুরা মায়েদা: ৬)


অজু করার দোয়া নিয়তঃ

অর্থ: পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। অজু করার সময় এ দোয়াটি পড়তে থাকা- اَللَّخُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ 

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসিলি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফি রিযক্বি। (নাসাঈ) 

অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও।


অযু কত প্রকার ও কি কি?

অজু তিন প্রকার: ফরজ, ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব। নামাজের জন্য অজু ফরজ। কাবা শরিফ তওয়াফের জন্য অজু করা ওয়াজিব। গোসল ও ঘুমানোর আগে অজু করা মুস্তাহাব।


অযুর ফরজ চারটি:

  • মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা
  • দুই হাতের কনুইসহ কব্জি পরিষ্কার করা
  • মাথা মসেহ করা
  • দুই পায়ের টাখনুসহ গোড়ালি পরিষ্কার করা


অজুর উপকারিতা

পাপের প্রভাব দূর : অজু শুধু মানুষের পাপগুলো দূর করে না; বরং দেহ-মন থেকে পাপের প্রভাব ও গ্লানি দূর করে দেয়। 

মহানবী (সা.) বলেন, 'কোনো মুসলিম কিংবা মুমিন বান্দা অজুর সময় যখন মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সঙ্গে বা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে বের হয়ে যায়।


অজু ভঙ্গের কারণ কয়টি?

  • এক. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া
  • দুই. রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। ( হেদায়া : ১/১০)
  • তিন. মুখ ভরে বমি করা
  • চার. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
  • পাঁচ. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
  • ছয়. পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে
  • সাত. নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে




Monday, May 13, 2024

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা - কুরআন ও হাদিসের আলোকে

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা - কুরআন ও হাদিসের আলোকে


নামাজ ভঙ্গের কারন সমূহ

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা কুরআন হাদিসের আলোকে। 


কুরবানির পরিচয়ঃ 

কুরবানীকে আরবী ভাষায় “উদ্বহিয়্যাহ” বলা হয়। এর অর্থ হল-ওই পশু যা কুরবানীর দিন যবেহ করা হয়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু যবেই করাই কুরবানী। 

কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলতঃ 

কুরবানি হলো ইসলামের একটি শি’য়ার বা মহান নিদর্শন। কুরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন- فصل لربك وانحر ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানি কর।’ (সূরা কাউসার, আয়াত-২)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, من وجد سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে’। (ইবনে মাজাহ-৩১২৩)।  যারা কুরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্কবাণী।

কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, لن ينال الله لحومها ولا دمائها ولكن يناله التقوي منكم  ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না উহার (জন্তুর) গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হাজ্জ, আয়াত-৩৭)।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 من وجد سعة ولم يضح، فلا يقربن مصلانا
অর্থ : যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। (মুসনাদে আহমদ; হা.নং ৮২৫৬)

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
يا أيها الناس: إن على كل أهل بيت في كل عام أضحية
অর্থ : হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হলো প্রতিবছর কুরবানী দেয়া। (সুনানে ইবনে মাজাহ; হা.নং ৩১২৫)

এই আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কুরবানী করা ওয়াজিব।

কোরবানির ইতিহাসঃ

(১) পৃথিবীর ইতিহাসে হযরত আদম আ. এর দুই পুত্রের কুরবানির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর কুরবানি সূচনা হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না।

সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’। (সূরা মায়েদা-২৭) যদি তুমি আমার প্রতি তোমার হাত প্রসারিত কর আমাকে হত্যা করার জন্য, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য আমার হাত তোমার প্রতি প্রসারিত করব না। নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি’। (সূরা মায়েদা-২৮)

(২) মুসলিম উম্মাহর জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. এর পুত্র হযরত ইসমাইল আ. কে কুরবানি করার মাধ্যমে দ্বিতীয় ইতিহাসের এক নতুন মাত্রা তৈরি হয়। তবে ইসলামে হযরত ইসমাইল আ.এর স্বরনে কুরবানি করা হয়।

কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন , কুরবানি হলো তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন।
কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা কুরআন হাদিসের আলোকে

আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’।অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে* কাত করে শুইয়ে দিল । ( সূরা আস- সাফফাতঃ- ১০২-৩)

কুরবানির নেসাব ও তার মেয়াদঃ 

কুরবানির নেসাব হলো হাজাতে আসলিয়া তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি ব্যতিরেকে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা তার মূল্য বা সমমূল্যের সম্পদের মালিক হওয়া।

প্রকাশ থাকে যে, জাকাতের নেসাব যা, কুরবানির নেসাবও তা। তবে কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে একটু অতিরিক্ত বিষয় রয়েছে। তা হলো- অত্যাবশ্যকীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অন্যান্য অতিরিক্ত আসবাবপত্র, সৌখিন মালপত্র, খোরাকি বাদে অতিরিক্ত জায়গা-জমি, খালিঘর বা ভাড়া ঘর (যার ভাড়ার ওপর জীবিকা নির্ভরশীল নয়) এসব কিছুর মূল্য কুরবানির নেসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/২৯২)।

জাকাত ও কুরবানির নেসাবের সময়সীমা নিয়েও পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো-জাকাতের নেসাব পূর্ণ এক বছর ঘুরে আসা শর্ত; কিন্তু কুরবানির নেসাব পূর্ণ এক বছর ঘুরে আসা শর্ত নয়। কেবল জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিন দিনের যে কোনো একদিন নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে। (ফতোয়ায়ে শামি)।

কুরবানির পশুর বিধানঃ

কুরবানির জন্য পশু আগেই নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত পশু জবেহর আগে কোনো কাজে ব্যবহার বা তা থেকে কোনো ধরনের উপকার নেওয়া যাবে না। যেমন-দান করা, বিক্রি করা, কৃষিকাজে ব্যবহার করা, দুধ ও পশম বিক্রি করা ইত্যাদি।

কুরবানির পশু ছাগল, ভেড়া কিংবা দুম্বা হলে একটিতে এক ভাগ এবং উট, গরু কিংবা মহিষ হলে একটিতে সাত ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে। গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হলো কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত ও দেখতে সুন্দর হওয়া। কুরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে।

কুরবানির উদ্দেশ্যে পশু ক্রয়ের পর যদি বাচ্চা হয় বা জবেহ করার পর তার পেট থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে হুকুম হলো- মায়ের সঙ্গে বাচ্চাটিকেও কুরবানি করে দিতে হবে। তবে ওই বাচ্চার গোশত নিজে খাবে না, বরং দান করবে। আর যদি বাচ্চাটি কুরবানি না করে কোনো গরিব-মিসকিনকে দান করে, তাও জায়েজ রয়েছে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি-৩/৩৫৪)।

কুরবানির পশু ও তার বয়সঃ

এমন পশু দ্বারা কুরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে; আর তা হলো ছয় ধরনের পশু। সেগুলো হলো- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা।
শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা পূর্ণ এক বছরের হতে হবে। তবে যদি ছয় মাস বয়সের ভেড়া বা দুম্বা মোটাতাজায় এক বছরের মতো মনে হয়, তখন তা দিয়েও কুরবানি করা জায়েজ আছে। কিন্তু ছাগল যতই মোটাতাজা হোক, এক বছরের একদিন কম হলেও তা দিয়ে কুরবানি জায়েজ হবে না।

যেমন হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই মুসিন্না (নির্দিষ্ট বয়সের পশু) কুরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানি করতে পার’। (সহিহ মুসলিম-১৯৬৩)।

যে সমস্ত ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানী করা জায়েয নয়ঃ

ইসলামি বিধান মতে মোট ছয় ধরনের পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়। আর তা হলো-উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এ পশুগুলোকে সুনির্দিষ্ট কিছু দোষ বা খুঁত থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
ক. অন্ধ, কানা বা খোঁড়া জানোয়ার কুরবানী করা দুরস্ত নয়। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১৪৯৭, ১৫০৩, সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২৮০৪, ফাতাওয়া শামী ৫/৩১৬, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৭)

খ. পশু যদি এমন রুগ্ন ও দুর্বল হয় যে, কুরবানীর স্থান পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে পারে না, তাহলে এমন জানোয়ারের কুরবানী জায়েয হবে না। (সুনানে নাসাঈ; হা.নং ৭২১৫, সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১৫০৩, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৭)

গ. জন্তুর কান বা লেজ এক তৃতীয়াংশ বা তার চেয়ে বেশি কেটে গিয়ে থাকলে, তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১৪৯৮, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮)

ঘ. যে পশুর মোটেও দাঁত নেই, কিংবা অধিকাংশ দাঁত পড়ে গেছে, তার দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। যদি অধিকাংশ দাঁত বিদ্যমান থাকে, তাহলে কুরবানী জায়েয হবে। (ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮)

ঙ. যে পশুর শিং উঠেইনি, কিংবা উঠেছিল কিন্তু উপর থেকে ভেঙ্গে গেছে, তার কুরবানী জায়েয। কিন্তু একেবারে মূল থেকে ভেঙে গিয়ে থাকলে, কুরবানী দুরস্ত নয়। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১৫০৪, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৭)

চ. যে জানোয়ারের খুঁজলি বা চর্মরোগ হয়েছে, যদি এর প্রতিক্রিয়া গোশত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে থাকে, তবে কুরবানী দুরস্ত নয়, অন্যথায় দুরস্ত আছে। (আহকামে কুরবানী; পৃষ্ঠা ৩৬)

ছ. যে মাদী জানোয়ারের স্তন নেই, কিংবা স্তন আছে কিন্তু শুকিয়ে গেছে অথবা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ঔষধের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে, তাহলে এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে না। (কিফায়াতুল মুফতী ৮/১৮৯, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮)

কুরবানির পশু জবেহর সময়ঃ

কুরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। কুরবানির পশু জবেহ করার সময় হলো ৩ দিন-জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ। এটাই ওলামায়ে কেরামের কাছে সর্বোত্তম মত হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছে।

এ সময়ের আগে যেমন কুরবানি আদায় হবে না, তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। অবশ্য কাজা হিসাবে আদায় করলে ভিন্ন কথা। যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কুরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে।

যদি ঈদের সালাত আদায়ের আগে কুরবানির পশু জবেহ করা হয়, তাহলে কুরবানি আদায় হবে না। কিন্তু যে স্থানে ঈদের নামাজ বা জুমার নামাজ বৈধ নয় বা ব্যবস্থা নেই, সে স্থানে ১০ জিলহজ ফজর নামাজের পরও কুরবানি করা বৈধ হবে। (কুদুরি) আর কুরবানির শেষ সময় হলো জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা কুরআন হাদিসের আলোকে

কুরবানির পশু হারিয়ে গেলে বিধানঃ 

যদি পশুটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় বা মারা যায়, আর কুরবানিদাতা যদি বিত্তশালী হয় কিংবা তার ওপর পূর্ব থেকেই কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে; তাহলে আরেকটি পশু কুরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হবে। আর যদি সে গরিব হয় (কুরবানি ওয়াজিব না থাকে), তাহলে তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। কুরবানির জন্য নতুন পশু ক্রয়ের পরে যদি হারানো পশুটি পাওয়া যায়, তাহলে কুরবানিদাতা গরিব হলে দুটি পশুই কুরবানি করা ওয়াজিব হবে। আর ধনী হলে যে কোনো একটি কুরবানি করলেই তার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (বাদায়ে সানায়ে-৪/২১৬)।

কুরবানির পশু জবেহ করার নিয়মঃ 

কুরবানির পশু জবেহ করার জন্য রয়েছে কিছু দিকনির্দেশনা। তবে পশু জবেহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্তত নিম্নোক্ত দুটি বিষয়ের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। নতুবা কুরবানির পশু জবেহ বিশুদ্ধ হবে না। বিষয় দুটি হলো- 

১) জবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা। তবে ‘বিসমিল্লাহ’-এর সঙ্গে ‘আল্লাহু আকবার’ যুক্ত করে নেওয়া মুস্তাহাব। ইচ্ছাকৃতভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা পরিত্যাগ করলে জবেহকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলবশত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয়, তবে তা খাওয়া বৈধ। কোনো ব্যক্তি যদি জবেহ করার সময় জবেহকারীর ছুরি চালানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে, তবে তাকেও ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে; নতুবা জবেহ শুদ্ধ হবে না।

২) জবেহ করার সময় কণ্ঠনালি, খাদ্যনালি এবং উভয় পাশের দুটি রগ অর্থাৎ মোট চারটি রগ কাটা জরুরি। কমপক্ষে তিনটি রগ যদি কাটা হয়, তবে কুরবানি বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দুটি রগ কাটা হয়, তখন কুরবানি বিশুদ্ধ হবে না। (হিদায়া)।

কুরবানির গোশতের হুকুমঃ

কুরবানির গোশত কুরবানিদাতা ও তার পরিবারের সদস্যরা খেতে পারবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও’। (সূরা হজ্জ, আয়াত-২৮)।

ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসাবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মুস্তাহাব। কুরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোনো কিছু বিক্রি করা জায়েজ নেই। কারণ তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত বস্তু। তবে চামড়া বিক্রি করা যেতে পারে, কিন্তু টাকা গরিবদের দান করতে হবে। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসাবে কুরবানির গোশত দেওয়া জায়েজ নয়।

যেহেতু সেটিও এক ধরনের বিনিময় যা ক্রয়-বিক্রয়ের মতো। তার পারিশ্রমিক আলাদাভাবে প্রদান করতে হবে। হাদিসে এসেছে-‘আর তা প্রস্তুতকরণে তা থেকে কিছু দেওয়া হবে না’। (সহিহ বুখারি-১৭১৬)। তবে দান বা উপহার হিসাবে কসাইকে কিছু দিলে তা নাজায়েজ হবে না।

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়ালা কুরআন হাদিসের আলোকে

আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কুরবানি আদায়ের ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ খেয়াল রেখে সহীহ নিয়তে সঠিক নিয়মে কুরবানির পশু জবেহ করে একনিষ্ঠতার সঙ্গে গ্রহণযোগ্য কুরবানি আদায়ের তাওফিক দান করুন।  

Sunday, May 12, 2024

 নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি? জেনে নিন - Islamer-Bani24

নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি? জেনে নিন - Islamer-Bani24

নামাজ ভঙ্গের কারন সমূহ

 



নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি? জেনে নিন


নামাজ সঠিক হওয়ার জন্য যেমন কিছু নিয়ম রয়েছে। তেমনি নামাজ এমন কিছু কাজ আছে যা করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি? 


আজ এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন নামাজ ভঙ্গের  কারণ কি কি?


যে সকল কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় বা নামাজ নষ্ট হয় তাকে বলে “মোফছেদাতে নামাজ”।


নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি


আমরা মুসলিম আর একজন মুসলিম হিসাবে আমাদের প্রতিটি মুসলিম মানুষের উচিৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। কারণ মৃত্যুর পরে আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নিবেন।


আমরা মুসলিম ঠিকই, নামাজও আদায় করি ঠিকই। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করতে এখনও পারেন না। কিনবা নামাজ ভঙ্গের কারণ সমূহ জানেন না।


আজ এই পোস্টটি ওই সকল মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য। তাই দেরি না করে এখনই পোস্টটি পড়ে নিন। জেনে নিন আপনাদের অনেক না জানা তথ্য। বিস্তারিত পড়ে দেখবেন অবশ্যই। 


নামাজ ভঙ্গের ১৯ টি কারণ


১) নামাজে অশুদ্ব তেলাওয়াত করা।


২) নামাজের ভিতর কথা বলা।


৩) কোনো লোককে সালাম দেওয়া।


৪) সালামের উত্তর দেওয়া।


৫) বিনা কারণে উঃ! আহ্ শব্দ করা।


৬) বিনা কারণে কাশিঁ দেওয়া।


৭) আমলে কাছির করা।


৮) বিপদে বা ব্যথায় শব্দ করে কাদাঁ।


৯) তিন তাছবিহ পরিমাণ সময় ছতর খুলে থাকা।


১০) মুকতাদি ব্যথিত অপর লোকের লোকমা নেয়া।


১১) সুসংবাদ ও দুঃখ সংবাদের উত্তর দেওয়া।


১২) নাপাক জায়গায় সিজদা দেওয়া।


১৩) কিবলার দিক হইতে ছিনা ফিরিয়ে নেওয়া।


১৪) নামাজে কোরআন দেখে পড়া।


১৫) নামাজে কোনো কিছু খাওয়া ও পান করা।


১৬) নামাজে শব্দ করে হাসা।


১৭) নামাজে হাঁচির উত্তর দেওয়া।


১৮) নামাজে দুনিয়াবি কোনো কিছু প্রার্থনা করা।


১৯) ইমামের আগে মুকতাদি দাড়ানো।



নামাজ ভঙ্গের বিস্তারিত কারণ ১৯ টি নিম্নে দেওয়া হলোঃ


১. নামাজ অশুদ্ধ ভাবে পড়া।

যেমনঃ নামাজের ভেতর কিরাতে যদি আপনার এমন পরিবর্তন হয়, যার ফলে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়, তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে, আবার নতুন করে আদায় করতে হবে।


২. নামাজের ভেতর কথা বলা।

যেমনঃ নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক কথা বললে, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। নতুন করে আবার আদায় করতে হবে।


৩. কোনো লোককে সালাম দেওয়া।

যেমনঃ নামাজ আদায় অবস্থায় কোনো লোককে সালাম দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


৪. সালামের উত্তর দেওয়া।

যেমনঃ সালাম অর্থ শান্তি। প্রতিটি মুসলমানের উচিৎ একজন আরেক জনের সাথে দেখা হলে প্রথমে সালাম দেওয়া। কিন্তু নামাজরত অবস্থায় কারো সালামের উত্তর দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


৫. উহ্-আহ্ শব্দ করা।

যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় কোনো ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাই নামাজরত অবস্থায় উহ্-আহ্ শব্দ করা যাবে না।


৬. বিনা ওজরে (কারণে) কাশি দেওয়া।

যেমনঃ নামাজ হলো শ্রেষ্ঠ ইবাদত। প্রতিটি মুসলমানদের উচিৎ মন দিয়ে ভালো ভাবে আল্লাহর ইবাদত করা। যদি কেউ নামাজে দাঁড়িয়ে অপ্রয়োজনে কাশি দেয়। তাহলে অপ্রয়োজনে কাশি দেওয়ার দ্বারাও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


৭. আমলে কাসির করা।

যেমনঃ কোনো মুসল্লি এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। তাদের তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


৮. বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা।

যেমনঃ কোনো বিপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


৯. তিন তাসবিহ পরিমাণ শরীর খুলিয়া থাকা।

যেমনঃ নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ হবে না। তাই যদি কোনো ব্যক্তির গেঞ্জি, শার্ট ও প্যান্ট নাভির নিচ থেকে রুকু সিজদার সময় সরে গিয়ে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় এভাবে অতিবাহিত হয়, তাহলে তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


নারীদের মাথা ও সতর ডাকা। কোনো কারণে মাথার ওড়না সরে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ওড়না ছাড়া নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তার নামাজ কবুল করেন না।


১০. মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা লওয়া।

যেমনঃ ইমাম সাহেব কিরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি


১১. সুসংবাদ বা দুঃসংবাদে উত্তর দেওয়া।

যেমনঃ সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া দুনিয়ার কথার সাথে নামাজরত অবস্থায় শামিল হলে, এর দ্বারা নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


১২. নাপাক জায়গায় সেজদা করা।

যেমনঃ নামাজের জায়গা পবিত্র না হলে নামাজ হবে না। নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া জরুরি। নামাজ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ইবাদত। অর্থাৎ নামাজ পড়ার সময় নামাজি ব্যক্তির শরীর যেসব জায়গা স্পর্শ করে, সে জায়গাগুলো পবিত্র হওয়া, যা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত। তাই অপবিত্র জায়গায় সেজদা করলে নামাজ হবে না নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


১৩. নামাজের মধ্যে কিবলার সিনা ঘুরে যাওয়া।

যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় কোনো কারণে সিনা কিবলা থেকে ঘুরে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে যানবাহনের ক্ষেত্রে আলাদা।


১৪. নামাজে শব্দ করে হাসলে।

যেমনঃ নামাজে শব্দ করে হাসলে ওজু ভেঙে যায়। আর ওজু ভেঙে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


১৫. নামাজে কোরআন দেখে পড়লে।

যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় কোরআন দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


১৬. নামাজে সাংসারিক কোনো বিষয় প্রার্থনা করলে।

যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় সাংসারিক কোনো দোয়া করলে হানাফি মাজহাব মতে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে এ মাসআলার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত আছে।


১৭. নামাজে হাঁচির উত্তর দেওয়া।

যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় কারো হাসির উত্তর দেওয়া কথা বলার নামান্তর। যদি কেউ নামাজরত অবস্থায় হাসির উত্তর দেয় এর দ্বারা তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


১৮. নামাজে খাওয়া বা পান করা।

যেমনঃ যদি কেউ কিছু খায় বা পান করে তা যদি দাতে আটকে থাকা খাদ্য জিহবা দিয়ে বের করে খেয়ে ফেলে। উক্ত খাদ্য চানাবুটের চেয়ে ছোট হয় তাহলেও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।


১৯. ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো।

যেমনঃ মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যদি মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়, কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমাম সাহেবকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না।


নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি

আমরা সকলেই জানি এক মাত্র নামাজের মাধ্যমে দুনিয়ায় ও আখেরাতে কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই আমাদের সকলের উচিৎ জেনে বুঝে ভালো ভাবে নামাজ আদায় করা।


আজ এই পোস্টটি পাড়ার পরে আশা করি আর কোনো সমস্যা থাকবে না আপনাদের নামাজ ভঙ্গের ১৯ টি কারণ নিয়ে।  আজই এইসকল কাজ নামাজরত অবস্থায় পরিহার করুন। নামাজ সহীহ শুদ্ধ করুন। ইনশাআল্লাহ কবুলের মালিক আল্লাহ। 

Wednesday, May 8, 2024

সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের নিয়ম - Islamer-Bani24

সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের নিয়ম - Islamer-Bani24

নামাজের নিয়মাবলী



নামাজের নিয়মাবলী

মুসলিমদের নামাজ পড়ার নিয়ম কুরআন ও হাদীস হতে এসেছে। কুরআনে এর বিশদ বিবরণ অন্তর্ভূক্ত হয় নি, তাই নামাজের নিয়মের ক্ষেত্রে হাদীসকে অনুসরণ করা হয়।


নিয়ম

নামাজের প্রধান ধাপগুলোকে 'রাকাত' বলা হয়। নামাজ দুই বা তিন বা চার রাকাত হতে পারে। ইসলামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে নামাজ পড়ার রীতিতে কিছু পার্থক্য রয়েছেঃ শিয়া ও সুন্নি পার্থক্য পাশাপাশি সুন্নিদের মধ্যে মাজহাবী পার্থক্য ও লা মাজহাবী তথা আহলে হাদীস বা সালাফী পার্থক্য।


নামাজ আরবিতে পড়ার কারণ

আহমেদ হুসাইন শরীফ তার "হোয়াই প্রে ইন এরাবিক" (নামাজ কেন আরবিতে পড়া হয়?) বইতে আরবিতে নামাজ পড়ার পেছনে যে সকল কারণ বলেছেন তা হল,


  • আরবি হল একটি গভীর ও বিস্তৃত ভাষা
  • নামাজের জন্য একটি সাধারণ ও সার্বজনীন ভাষা
  • (আরবির মাধ্যমে) ইসলামী ভ্রাতৃত্বে সংযোগ স্থাপন।
  • কুরআন হল আল্লাহর সৃজনকর্ম
  • কুরআনের পূর্নাঙ্গ ও পরিপূর্ণ অনুবাদ করা অসম্ভব
  • কুরআনই একমাত্র (ঐশীভাবে) সংরক্ষিত ওহী
  • কুরআনের নিজস্ব ছন্দ রয়েছে

দোয়া এবং নামাজের পার্থক্য হলোঃ দোয়া হল আমন্ত্রণ বা মিনতি, যা ঐচ্ছিক, তাই তা শিথিল এবং তা যে কোন ভাষায় করা যায়, আর নামাজ হলো প্রার্থনা, যা বাধ্যতামূলক ও তার নীতিমালা কঠোর, এছাড়া জামাতে ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে মুসলিমদের সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত রাখারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে, একারণে নামাজ শুধু আরবিতে পড়তে হয়।

আরবি নামাজ বুঝতে শেখা কঠিন কিছু নয় এবং তা সহজ।

পরিশেষে তিনি বলেন, "এইভাবে আমরা দেখতে পাই যে, নামাজের মাধুর্য, মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতা মূল আরবীতে নামাজ পড়ার উপর নির্ভর করে; এবং যদি অনুবাদে নামাজ পড়া হয়, তবে কুরআনের সাহিত্যিক এবং শৈল্পিক মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে বাধ্য; এবং অনূদিত নামাজের ফলে সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব।


সুন্নি হানাফি নিয়ম


প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামাজ শুরু করতে হয়। তারপর সানা পড়তে হয়। সানা কেবল প্রথম রাকাতে পাঠ করতে হয়। প্রতি রাকাতে প্রথমে সুরা ফাতিহা ও অপর একটি সুরা বা অংশ বিশেষ পাঠ করতে হয়।


পশতুন মুসলিমরা ঈদের নামাজে রুকু করছেন, কান্দাহার, আফগানিস্তান।

এরপর রুকু করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ছোটো একটা বিরতি দিয়ে সিজদা করতে হয়। সিজদা দুুইবার করতে হয়, আর দুটি সিজদার মাঝে ছোট্ট একটা বৈঠক করতে হয়। ঠিক একই ভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত সম্পূর্ণ করতে হয়।


দুই রাকআত নামাজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতের দুই সিজদা সম্পূর্ণ করার বসে যথাক্রমে "আত্তাহিয়াতু (তাশাহুদ)" ও "দরূদ শরীফ" ও "দোয়া মাসুরা" পড়তে হয়। অতঃপর প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।


তিন বা চার রাকাতের নামাজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে তাশাহুদ ("আত্তাহিয়াতু") দোয়া পড়তে হয় এবং পাঠ শেষে দাঁড়িয়ে উঠে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত পড়তে হয়। শেষ রাকাতের দুই সিজদা সম্পূর্ণ করার বসে যথাক্রমে "আত্তাহিয়াতু (তাশাহুদ)" ও "দরূদ শরীফ"ও "দোয়া মাসুরা" পড়তে হয়। অতঃপর প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।


পার্থক্য

নামাজের নিয়মে শিয়া ও সুন্নি পার্থক্য রয়েছে। আবার সুন্নিদের মধ্যে মাযহাবগত নামাজের পার্থক্য আছে, পাশাপাশি আহলুল হাদীস ও সালাফী সম্প্রদায় নামাজের নিয়মের ক্ষেত্রে সরাসরি কোরআন ও সহীহ হাদীসকে তথা সালাফকে সরাসরি অনুসরণ করে অন্যান্য সকল ব্যক্তির সাংঘর্ষিক মতামতকে বর্জন করার দাবি করে থাকে।


আহলে হাদীস/সালাফি পার্থক্য

নামাজের নিয়মে মাজহাব বা ঈমাম বা আলেমের যাচাইবিহীন অনুসরণ (তাকলিদ) না করে সহীহ হাদীস অনুসরণ করা

  • নামাজের নিয়তে নির্দিষ্ট কোন দোয়া না পড়া
  • নামাজে নাভির উপরে/বুকের উপর হাত বাধা
  • সশব্দে আমীন বলা
  • রুকুর আগে ও পরে এবং সিজদার আগে তাকবীরে হাত তোলা
  • সিজদায় যাওয়ার সময় পায়ের আগে হাত রাখা
  • সেজদা থেকে উঠে দাড়ানোর সময় হাতে ভর করে ওঠা
  • তাশাহুদে তর্জনী আঙ্গুল ক্রমাগত নাড়ানো
  • সিজদা সাহু নামাজ শেষে সালাম ফেরানোর পর করা
  • তিন রাকাত বিতরে দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠকে না বসা

বিতরের নামাজে প্রচলিত হানাফি দোয়ায় কুনুতকে কুনুতে নাজেলা বা বিপদকালীন কুনুত দাবি করে তা বিপদ ছাড়া নিয়মিত না পড়া এবং সিহাহ সিত্তাহসহ সুন্নি হাদীসে বর্নিত অন্যান্য কুনুত পড়া

বিতর নামাজকে ওয়াজিব বলার ক্ষেত্রে কোন কোন আহলে হাদীস আলেমের ভিন্নমত পোষণ করা

ফরজ নামাজ শেষে সম্মিলিত মুনাজাত না করা

জুম্মার নামাজের খুতবার পূর্বে বা মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথে সুন্নত পড়া ও তা চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত পড়া

মাগরিবের ফরজ নামাজের আগে মসজিদে প্রবেশের পর দুইরাকাত সুন্নত নামাজ পড়া বা পড়তে উৎসাহিত করা

অনারব দেশসমূহে জুম্মার নামাজে জনগণের বোধগম্য ভাষায় শুধুমাত্র একটি খুতবা দেওয়া, আলাদাভাবে আরবিতে খুতবা না দেওয়া


(পোষ্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন)