সর্বশেষ

Sunday, December 15, 2024

সুরা ইখলাসের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ | Surah Ikhlas Bangla

সুরা ইখলাসের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ | Surah Ikhlas Bangla

 


সূরা আল-ফালাক (আরবি: سورة الفلق; নিশিভোর)


সুরা ইখলাসের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ | Surah Ikhlas Bangla

সূরা আল-ফালাক (আরবি: سورة الفلق; নিশিভোর)

শ্রেণী: মাদানী সূরা

নামের অর্থ: নিশিভোর

সূরার ক্রম: ১১৩

আয়াতের সংখ্যা: ৫

পারার ক্রম: ৩০

রুকুর সংখ্যা: ১

সিজদাহ্‌র সংখ্যা: নেই


সূরা আল-ফালাক (আরবি: سورة الفلق; নিশিভোর) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১৩ তম সূরা; এর আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৫ এবং রূকু, তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১। সূরা আল-ফালাক মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[১] এর পাঁচ আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা হয়। এই সূরাটি এবং এর পরবর্তী সূরা আন-নাসকে একত্রে মু'আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু'টি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বা ঘুমের আগে এই সূরাটি পড়া একটি ঐতিহ্যগত সুন্নত।


নামকরণ

সূরা ফালাক ও সূরা আন-নাস আলাদা আলাদা সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সাথে এত বেশি নিকট সম্পর্কিত যে এদেরকে একত্রে “মু’আওবিযাতাইন” (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে ডাকা হয়; আর এই সূরা দু’টি নাযিলও হয়েছে একই সাথে একই ঘটনার পরি-প্রেক্ষিতে।


শানে নুযূল

সূরা আল ফালাক ও পরবর্তী সূরা নাস একই সাথে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহু্দী রসূলুল্লাহ্‌ (সা:)- এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল (আ:) আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহু্দী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রসুলুল্লাহ (সা:) লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দুটি পড়ে ফুক দেওয়ায় গিরুগুলো সাথে সাথে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।


হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ (সা:) - এর উপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা (রা:) -কে বললেনঃ আমার রোগটা কি, আল্লাহ্ তা'আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ'সাম জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হলঃ কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে 'বির যরোয়ান' কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ (সা:) সে কূপে গেলেন এবং বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।[৭]


মুসনাদে আহমদের রেওয়ায়েতে আছে, রসুলুল্লাহ (সা:) -এর এই অসুখ ছয় মাস স্থায়ী হয়েছিল।

সূরা আল-ফালাক

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণ:বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

অর্থ:পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।


قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ 

উচ্চারণ:কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিল ফালাক।

অর্থ: বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,


مِن شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ:মিন শাররি মাখালাক্ব।

অর্থ:তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে, 


وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ

উচ্চারণ:‎ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইযা অক্বাব।

অর্থ:অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,


‏ وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ

উচ্চারণ:ওয়া মিন শাররিন নাফ্‌ফাসাতি ফিল্‌ উকাদ।

অর্থ:গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে 


وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ 

উচ্চারণ:ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।

অর্থ:এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।



হাদিস

আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সা:) বলেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। - (ইবনে-কাসীর)[৯]

সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের -এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ (সা:) বলেনঃ তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থাৎ ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিল নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই।

এক সফরে রসূলুল্লাহ (সা:) ওকবা ইবনে আমেন -কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বললেনঃ এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো। অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। - (আবু দাউদ, নাসায়ী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রসূলুল্লাহ (সা:) -কে খুঁজতে বের হলাম। যখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা এখলাস ও সূরা নাস সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। - (মাযহারী)






Tuesday, December 10, 2024

হিন্দুস্তানের যুদ্ধ -গাযওয়াতুল হিন্দ

হিন্দুস্তানের যুদ্ধ -গাযওয়াতুল হিন্দ



হিন্দুস্তানের যুদ্ধ -গাযওয়াতুল হিন্দ 


ভূমিকা : 


ইসলাম সার্বজনীন কালজয়ী আদর্শ হিসাবে বিশ্বের প্রতিটি বাড়িতে বা অঞ্চলে পৌঁছে যায়। ‘একটি আয়াত জানা থাকলেও প্রচার কর’ ইসলাম প্রচারে রাসূল (ছাঃ)-এর এমন হাদীছের অনুসরণ করা ছাহাবীদের নিকট প্রণিধানযোগ্য আমল ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বীনের সর্বাত্মক প্রচার-প্রসারে রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গী-সাথীগণ নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেন এবং বিভিন্ন ইসলামী খেলাফতকালে মুসলমানদের বিশ্বজয় ত্বরান্বিত হতে থাকে। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) অর্ধ পৃথিবীতে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েও পরিতৃপ্ত হননি। তিনি চেয়েছিলেন গোটা বিশ্বে ইসলামের শান্তির বাণী পৌঁছে দিবেন। প্রাণভরা আশা নিয়ে তাঁর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। পরবর্তী খলীফা ওছমান (রাঃ) সুদূর চীনে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। তারা তৎকালীন চীন সম্রাটের নিকট ইসলামের বাণী পৌঁছে দেন। এরপরে ব্যাপক হারে ইসলামের বাণী দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে দলে দলে মুসলমানেরা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। হিন্দ বা ভারতবর্ষে তো রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেই ইসলাম দাওয়াত পৌঁছে যায়। বিশেষ করে ভারতবর্ষের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যৎ বাণী থাকায় আমীরে মু‘আবিয়ার আমলে ছাহাবী ও তাদের অনুসারীরা ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ভারতবর্ষে ছুটে আসেন। পরবর্তীতে মুহাম্মদ বিন কাসিম ও তৎপরবর্তীতে গযনীর সুলতান মাহমূদ ভারতবর্ষ বা হিন্দুস্থানের উপর বিজয় লাভ করেন। এভাবে হিন্দুস্থান বা ভারতবর্ষে মুসলমানেরা প্রায় আটশ বছর শাসন করেন। দূর্ভাগ্যক্রমে মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের হাতে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। ইংরেজ শাসনের ২০০ বছর পরে আবার হিন্দুস্তানের বড় অঞ্চলের শাসনভার হিন্দুদের হাতে চলে যায়।


এক্ষণে গাযওয়াতুল হিন্দ বা ‘হিন্দুস্থানের যুদ্ধ’ অর্থাৎ ভারত বা হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পতিত একদল মানুষ মনে করে, বর্তমান হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে হাদীছে বর্ণিত মর্যাদা লাভ করা যাবে। এই হাদীছের সঠিক মর্ম না বোঝার কারণে একদল যুবক জড়িয়ে পড়ছে ইসলাম ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ডে। অযথা নষ্ট করছে অর্থ ও মূল্যবান মেধা। এমনকি বিপথগামী হয়ে বিলিয়ে দিচ্ছে নিজের মূল্যবান জীবনটাকেও। অথচ জান্নাত পাওয়ার অসংখ্য সহজ ও সরল পথের দিকে তারা ভ্রক্ষেপও করছে না। কেন এই ভ্রান্ত নেশায় জড়িয়ে পড়ছে এই যুবকেরা? এর ভিত্তিই বা কী? হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা বুঝেই তারা আবেগে ভেসে এই পথে এগুচ্ছে। আসলে হাদীছে কী বলা হয়েছে বা এর সঠিক ব্যাখ্যাই বা কী? নিমেণর আলোচনায় তা স্পষ্ট করা হবে ইনশাআল্লাহ।


গাযওয়াতুল হিন্দ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীছ সমূহের পর্যালোচনা :


গাযওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে বেশ কিছু বর্ণনা এসেছে যার দু’একটি ব্যতীত সবগুলো যঈফ অথবা জাল। যেমন :


-1عَنْ ثَوْبَانَ، مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمَا اللهُ مِنَ النَّارِ : عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ، عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ-

(১) ছাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের দু’টি দলকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার একটি হচ্ছে যারা হিন্দুস্থানবাসীদের সাথে যুদ্ধ করবে। আর একটি হচ্ছে যারা ঈসা (আঃ)-এর সাথে থাকবে।[1] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, من أدركه منكم فليقرئه مني السلام ‘যে তোমাদের মধ্যে তাঁকে (ঈসাঃ)-কে পাবে, আমার পক্ষ থেকে সালাম দিবে’।[2]


-2عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضِيَ الله عنْهُ ، قَالَ : وَعَدَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِى وَمَالِى وَإِنْ قُتِلْتُ كُنْتُ أَفْضَلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ رَجَعْتُ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ-

(২) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের সাথে হিন্দুস্থানের যুদ্ধের ওয়াদা করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি সে যুদ্ধ পেলে আমার জান ও মাল দিয়ে যুদ্ধ করব। আর আমি মারা গেলে শহীদদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি হব এবং ফিরে এলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্ত আবু হুরায়রা’।[3]


-3عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضِيَ الله عنْهُ ، قَالَ حَدَّثَنِى خَلِيلِى الصَّادِقُ رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يكُونُ فِى هَذِهِ الأُمَّةِ بَعْثٌ إِلَى السِّنْدِ وَالْهِنْدِ. "فَإِنْ أَنَا أَدْرَكْتُهُ فَاسْتَشْهَدْتُ فَذَلِكَ وَإِنْ أَنَا - فَذَكَرَ كَلِمَةً - رَجَعْتُ وَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ قَدْ أَعْتَقَنِى مِنَ النَّارِ.

(৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সত্যবাদী বন্ধু রাসূল (ছাঃ) হাদীছ বর্ণনা করেছেন, ‘এই উম্মতের মধ্যে থেকেই অভিযান প্রেরিত হবে সিন্দ ও হিন্দে। আমি সেটা পেলে তাতে শহীদ হওয়ার কামনা করি। আর যদি ফিরে আসি তাহলে আমি মুক্ত আবু হুরায়রা- অবশ্যই আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হয়েছে’।[4]


4- عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : يَغْزُو قَوْمٌ مِنْ أُمَّتِي الْهِنْدَ ، فَيَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ حَتَّى يُلْقُوا بِمُلُوكِ الْهِنْدِ مَغْلُولِينَ فِي السَّلاسِلِ ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَهُمْ ذُنُوبَهُمْ ، فَيَنْصَرِفُونَ إِلَى الشَّامِ فَيَجِدُونَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ بِالشَّامِ-

(৪) ছাফওয়ান বিন আমর হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের একদল লোক হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন। তারা হিন্দুস্তানের রাজাকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। যখন তারা সিরিয়ার দিকে ফিরে যাবে ঈসা বিন মারিয়াম (আঃ)-কে শামে পেয়ে যাবে’।[5]


 5-عَنْ كَعْبٍ، قَالَ: يَبْعَثُ مَلِكٌ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ جَيْشًا إِلَى الْهِنْدِ فَيَفْتَحُهَا، وَيَأْخُذُ كُنُوزَهَا، فَيَجْعَلُهُ حِلْيَةً لَبَيْتِ الْمَقْدِسِ، وَيُقْدِمُوا عَلَيْهِ بِمُلُوكِ الْهِنْدِ مَغْلُولِينَ، يُقِيمُ ذَلِكَ الْجَيْشُ فِي الْهِنْدِ إِلَى خُرُوجِ الدَّجَّالِ-

(৫) কা‘ব আল আহবার হতে বর্ণিত তিনি বলেন, বায়তুল মাকদিসের সুলতান হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে সেনা প্রেরণ করবে। তারা বিজয় লাভ করবে এবং ধনভান্ডার গ্রহণ করে বায়তুল মাকদেসের সৌন্দর্যবর্ধনে খরচ করবে। তারা হিন্দুস্তানের রাজাকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় মুসলিম শাসকের নিকট উপস্থিত করবে। ঐ সৈন্যদল দাজ্জালের আবির্ভাব পর্যন্ত হিন্দুস্তানে অবস্থান করবে’।[6]


‘গাযওয়াতুল হিন্দু’ সর্ম্পকিত পাঁচটির বর্ণনার মধ্যে চারটিরই সনদ যঈফ। তবে প্রথম বর্ণনাটি ছহীহ সনদ দ্বারা প্রমাণিত, যাতে বলা হয়েছে, ‘আমার উম্মতের দু’টি দলকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার একটি হচ্ছে যারা হিন্দুস্থানবাসীদের সাথে যুদ্ধ করবে। আর একটি হচ্ছে যারা ঈসা (আঃ)-এর সাথে থাকবে।[7] হিন্দুস্থানবাসীদের সাথে যুদ্ধকারী দলটি জাহান্নাম থেকে নাজাতপ্রাপ্ত। এক্ষণে যুদ্ধটি হয়ে গেছে? নাকী হবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, উক্ত যুদ্ধ হয়ে গেছে। যেমন ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে সর্বপ্রথম ১৫ হিজরীতে ওছমান বিন আবুল আছের নেতৃত্বে একটি সেনাদল হিন্দুস্থানে প্রেরিত হয়। যারা হিন্দুস্থানের থানা, ব্রূছ ও দেবল বন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। থানাকে বর্তমানে মুম্বাই, ব্রূছকে গুজরাট এবং দেবলকে করাচী বলা হয়। তারা এ সময় সরনদ্বীব জয় করেন। যাকে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা বলা হয়’।[8] ওছমান বিন আবিল আছের পর তার ভাই মুগীরা বিন আবিল আছও নতুনভাবে অভিযান পরিচালনা করেন’।[9]


এরপর ইসলামের তৃতীয় খলীফা ওছমান (রাঃ)-এর আমলে হাকীম বিন জাবালাহ আবাদীকে হিন্দুস্তানের অবস্থান জানার জন্য প্রেরণ করা হয়। তিনি ঘুরে এসে খলীফাকে প্রতিকূল অবস্থার কথা জানালে তিনি নতুন করে কোন অভিযান প্রেরণ করেননি। ৩৮ হিজরীর শেষে এবং ৩৯ হিজরীর শুরুর দিকে আলী (রাঃ)-এর খেলাফতকালে হারেছ বিন মুর্রাহ আবাদীর নেতৃত্বে হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরিত হয়। তিনি বিজয় লাভ করেন এবং অনেক গণীমতের সম্পদ লাভ করেন। এরপর ৪৪ হিজরীতে আমীরে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর আমলে মুহাল্লাব বিন আবী ছাফরার নেতৃত্বে অভিযান প্রেরিত হয়। তিনি মুলতান ও কাবুল অঞ্চলে পৌঁছলে শক্রর মুখোমুখি হন এবং শক্রদের হত্যা করে বিজয় লাভ করেন। ১৮ জন তুর্কী অশ্বারোহী তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ালে তিনি তাদের হত্যা করেন এবং বহু গণীমতের সম্পত্তি লাভ করেন। এরপর আব্দুল্লাহ বিন সাওয়ার আবাদীর নেতৃত্বে সৈন্য প্রেরিত হয়। তিনি কীকানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় লাভ করেন এবং বহু সম্পদ লাভ করেন। তিনি একটি কীকানী ঘোড়া মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর জন্য হাদিয়া হিসাবে প্রেরণ করেন’।[10] এরপর ৯৩ হিজরীতে খলীফা ওয়ালীদ বিন আব্দুল মালিকের আমলে (৮৬-৯৬ হি.) মুহাম্মাদ বিন কাসেম ছাক্বাফীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সিন্ধু ও হিন্দুস্থান বিজীত হয়। তিনি প্রভাবশালী রাজা দাহিরকে পরাস্ত করে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন।[11]


এভাবে মুসলমানগণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর বিজয় লাভ করেন। যা হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে গযনীর সুলতান মাহমূদ বিন সুবুকতিগীন ও তাঁর প্রতিনিধিদের হিন্দুস্তানের উপর ১৭ বার আক্রমণ করার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছিল। হাফেয ইবনু কাছীর, যাহাবী ও ইবনুল আছীরসহ অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেন,وَقَدْ غَزَاهَا الْمَلِكُ السَّعِيدُ الْمَحْمُودُ مَحْمُودُ بْنُ سُبُكْتِكِينَ صَاحِبُ غَزْنَةَ وَمَا وَالَاهَا، فِي حُدُودِ أَرْبَعِمِائَةٍ، فَفَعَلَ هُنَالِكَ أَفْعَالًا مَشْهُورَةً، وَأُمُورًا مَشْكُورَةً؟ كَسَرَ الصَّنَمَ الْأَعْظَمَ الْمُسَمَّى بِسُومَنَاتَ، وَأَخَذَ قَلَائِدَهُ وَجَوَاهِرَهُ وَذَهَبَهُ وَشُنُوفَهُ، وَأَخَذَ مِنَ الْأَمْوَالِ مَا لَا يُحْصَى، وَرَجَعَ إِلَى بِلَادِهِ سَالِمًا مُؤَيَّدًا مَنْصُورًا. ‘সৌভাগ্যবান, প্রশংসিত, গযনীর সুলতান মাহমূদ বিন সুবুকতিগীন এবং গভর্নরেরা ৪০০ হিজরীর দিকে হিন্দুস্তানবাসীর সাথে যুদ্ধ করেন। তিনি সেখানে যে অভিযান প্রেরণ করেন তা ছিল প্রসিদ্ধ ও প্রশংসিত। তিনি বিখ্যাত সোমনাথ মন্দিরের সকল মূর্তি ভেঙ্গে চুরমার করে দেন এবং তথাকার যাবতীয় অলংকার, মণিমুক্তা, স্বর্ণ ও রোপ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করেন। তিনি সেখানে অগণিত সম্পদ লাভ করেন এবং নিরাপদে বিজয়ীবেশে দেশে ফিরে যান।[12] তারও পরে আববাসীয় যুগে ৬০২ হিজরীতে দিল্লী ও বাংলা বিজিত হয় এবং সারা ভারত বর্ষে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে।


আর এভাবেই পুরো ভারতের উপর মুসলমানদের কর্তৃত্ব চলে আসে এবং পরে মামলুক, খিলজী, তুঘলক, সাইয়িদ, লোদী এবং মুঘলেরা পুরো ভারতবর্ষ শাসন করে। সুতরাং উপরোক্ত


বর্ণনা থেকে ধরে নেওয়া যায় যে, হাদীছে বর্ণিত হিন্দুস্তান বাসীর

সাথে যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, তা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে।

এক্ষণে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ভারতবাসীর সাথে যুদ্ধ হবে শেষ যামানায়, যেমনটি কোন কোন বিদ্বান মনে করেন।[13] এতেও কিন্তু নির্দিষ্ট সময় ও কোন দলকে নির্দিষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। কারণ রাসূল সাধারণভাবে একটি দলের কথা বলেছেন।

শেষকথা :

গাযওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে উক্ত আলোচনার পর একথা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট হয়েছে যে, হাদীছে বর্ণিত গাযওয়াতুল হিন্দ বা হিন্দুস্তানবাসীর সাথে যুদ্ধ ইতিমধ্যে সংঘটিত হয়ে গেছে, যা বিদ্বানদের ব্যাখ্যায় সুপ্রমাণিত। তবুও যদি কারো মতে এই যুদ্ধ শেষ যামানায় হবে বলে ধরে নেয়া হয়, তবুও এ কথা নিশ্চিত করার সুযোগ নেই যে, ঠিক কোন সময় এটি সংঘটিত হবে বা কার নেতৃত্বে হবে। সুতরাং গাযওয়াতুল হিন্দ নিয়ে কতিপয় যুবসমাজের অতিশয়োক্তি, মাতামাতি কিংবা রঙিন স্বপ্ন দেখানো একেবারেই অর্থহীন কর্ম। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে জান্নাতের শর্টকাট রাস্তা খুঁজে পাওয়ার নামে একশ্রেণীর মুসলিম যুবক উগ্রবাদ ও চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যা খুবই ভয়ংকর। এই চরমপন্থীদের কারণে মুসলিম উম্মাহ ভেতরে ও বাইরে থেকে চরম অনিরাপদ ও কোনঠাঁসা হয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী নষ্ট হচ্ছে দাওয়াতের উর্বর ক্ষেত্রসমূহ। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের নামে হৃদয়কে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে হেফাযত করে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন- আমীন!


[লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]

[1]. নাসাঈ হা/৩১৭৫; ছহীহাহ হা/১৯৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০১২, সনদ ছহীহ।

[2]. আলবানী, কিছছাতু মাসীহিদ দাজ্জাল ১৪২ পৃ.।

[3]. নাসাঈ হা/৩১৭৪; আহমাদ হা/৭১২৮; বাযযার হা/৮৮১৯; সাঈদ ইবনু মানছুর হা/২৩৭৪, সনদ যঈফ।.

[4]. আহমাদ হা/৮৮০৯; ইবনু হাজার ইত্তেহাফ হা/১৭৯৫০; ইবনু কাছীর, আল বিদায়াহ ৯/২১৮, অত্র হাদীছের সনদে বারা বিন আব্দুল্লাহ গনভী থাকার কারণে সনদ যঈফ। তাছাড়া এতে ইনকেতা‘ রয়েছে।

[5]. নাঈম ইবনু হাম্মাদ, আল ফিতান হা/১২০২ ও ১২৩৯, উক্ত হাদীছের সনদও যঈফ। প্রথম এতে ওয়ালিদ বিন মুসলিম আনআনা করেছেন, দ্বিতীয়ত: এতে ইরসাল রয়েছে।

[6]. নাঈম ইবনু হাম্মাদ, আল-ফিতান হা/১২১৫, উপরোক্ত হাদীছটির বর্ণনাকারী ইহূদী পন্ডিত কা‘ব আল আহবার হওয়ায় সনদ অগ্রহণযোগ্য।

[7]. নাসাঈ হা/৩১৭৫; ছহীহাহ হা/১৯৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০১২, সনদ ছহীহ।

[8]. কাযী আতহার মুবারকপুরী, আল-ইক্বদুছ ছামীন ফী ফুতূহিল হিন্দ (কায়রো : দারুল আনছার, ২য় সংস্করণ ১৩৯৯ হি./১৯৭৯) ১/২৬, ৪০, ৪২, ৪৪।

[9]. রাসায়েলে ইবনু হাযম ২/১৩২; বালাযুরী, ফুতূহুল বুলদান ৪/১৬।

[10]. বালাযুরী, ফতুহুল বুলদান ৪১৬-১৮ পৃ.; ইয়াকুব আল হামাভী, মু‘জামুল বুলদান ৪/৪২৩।

[11]. আল-বিদায়াহ ৯/৭৭, ৯৫; আল-ইক্বদুছ ছামীন ১/১৪১-৪২।

[12]. আল বিদায়া ১৯/১১; আল-কামেল ফিত তারীখ ৭/৬০৭’ যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ২৭/২৪৪।

[13]. হামূদ তুওয়াইজেরী, ইত্তেহাফুল জামা‘আত ১/৩৬৬।

Monday, December 9, 2024

 স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়

স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়



 স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়




প্রশ্ন: এক বোনের পক্ষ থেকে প্রশ্নঃ

আমার হাজবেন্ড অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়া করে। তার সাথে আমার তেমন শারীরিক সম্পর্কও হয় না। আমার মনে হয়, পরকীয়ার কারণে সে আমার প্রতি আগ্রহী নয়। তবে সে আমাকে খাওয়া-পরা নিয়ে কোনো অভাবে রাখে না। আমার দুটা সন্তান আছে। এই যন্ত্রণা আমার সহ্য হয় না। সে একবার আমার কাছে ধরা পড়ার পর ক্ষমাও চায়। কিন্তু ঐ মেয়ের পাল্লায় পড়ে আবারও তার সাথে সম্পর্ক করে। এই ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?


উত্তর:

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

পরকীয়া নি:সন্দেহে দাম্পত্য জীবন, সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার বিরাট হুমকি। এটি নিজের হালাল স্ত্রীর সাথে আমানতের খেয়ানত, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার শামিল এবং আল্লাহ তাআলার ক্রোধের কারণ। 


যাহোক, কোন স্বামী এই ফিতনায় জড়িয়ে গেলে স্ত্রীর করণীয় হল:


◼ ১. কুরআন-হাদিসের আলোকে তাকে পরকীয়া, অবৈধ প্রেমপ্রীতি ও যিনাব্যাভিচারের ভয়াবহতা, ইসলামী আইন অনুযায়ী দুনিয়াতে এর কঠিন শাস্তি, আখিরাতের আযাব, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝানো। এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসে পর্যাপ্ত ব্ক্তব্য রয়েছে। তাই এ সংক্রান্ত যে কোন ভালো ইসলামী বই বা ইসলামী আলোচনার ভিডিও কাজে লাগানো যেতে পারে।


◼ ২. তার হেদায়েতের জন্য দয়াময় আল্লাহর নিকট দুআ করা। 


◼ ৩. স্ত্রীর মাঝে স্বামীর নিকট অপছন্দীয় কোন আচার-আচরণ থাকলে তা পরিবর্তন করা এবং যথাসাধ্য তাকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা। দাম্পত্য জীবনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক স্বামী-স্ত্রী এ বিষয়ে অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে সময়ের ব্যবধানে তারা দাম্পত্য জীবনের  উষ্ণতা ও আবেদন হারায়। ফলে দুজনের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং অবশেষে ঈমানী দূর্বলতা, কুপ্রবৃত্তির তাড়না এবং শয়তানের কুমন্ত্রণায় তারা ভিন্ন পথ খুঁজা শুরু করে।


◼ ৪. প্রয়োজনে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে ‌আরেকটি বিয়ে করার সম্মতি দেয়া।

 উল্লেখ্য যে, আল্লাহর দেয়া এ বিধানটির ব্যাপারে অনেক স্ত্রীর কঠোর ও ভয়াবহ আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক দুর্বল ঈমানদার স্বামী অবৈধ পথের দিকে পা বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীও এই অন্যায়ের জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচিত হবে।


◼ ৫. সম্ভব হলে সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে পারিবারিক বা সামাজিক সালিশ অথবা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 


◼ ৬. এগুলোর মাধ্যমে কোন উপকার না হলে হয় স্ত্রীকে ধৈর্য ধারণ করে স্বামীকে এ পথ থেকে ফিরানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায় সবশেষে তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে পৃথক হয়ে যেতে হবে।


আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানী)

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Sunday, December 8, 2024

 স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ? কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ? কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

 স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য কুরআন ও হাদিসের আলোকে। 

 স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য কুরআন ও হাদিসের আলোকে। 


স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য 

প্রিয় দীনি ভাই, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।


১. স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা। এক্ষেত্রে টালবাহানা না করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,


وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً


এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। (সূরা নিসা ৪)


২. বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,


أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ


তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ ঘরে তোমরা বাস কর তাদেরকেও সেরূপ ঘরে বাস করতে দেবে। (সূরা তালাক ০৬)


৩. স্বামী যে মানের খায়, স্ত্রীকেও সেই মানের খাওয়ানো এবং স্বামী যে মানের কাপড় পরিধান করে স্ত্রীকেও সে মানের কাপড়চোপড় দয়া। হাদিস শরিফে এসেছে, মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী রাযি. বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট এসে বললাম, আমাদের স্ত্রীদের (হক) সম্পর্কে আপনি কি বলেন? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন,


أطعِمُوهن ممَّا تأكلونَ، واكسوهنَّ ممَّا تكتَسُونَ، ولا تَضرِبوهنَّ ولا تُقَبِّحوهنَّ


তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তা পরিধান করাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না। (আবু দাউদ ২১৪৪)


৪. স্ত্রীর সামনে নিজেকে পরিপাটি রাখা। কেননা, পুরুষরা তাদের সঙ্গিনীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। ঠিক একইভাবে তারা তাদের সঙ্গীকেও সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. বলতেন,


إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَتَزَيَّنَ لِلْمَرْأَةِ ، كَمَا أُحِبُّ أَنْ تَتَزَيَّنَ لِي الْمَرْأَةُ ، لِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ : { وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ } ، وَمَا أُحِبُّ أَنْ أَسْتَنْظِفَ جَمِيعَ حَقِّي عَلَيْهَا ، لِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ : { وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ }


আমি আমার স্ত্রীর জন্য পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন পছন্দ করি আমার স্ত্রী আমার জন্য পরিপাটি থাকাকে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর, নিয়ম অনুযায়ী।’ আর আমি আমার অধিকার স্ত্রীর কাছ থেকে কড়ায়গণ্ডায় আদায় করে নেয়া পছন্দ করি না। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ১৫৭১২)


তবে উক্ত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উভয়কেই হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।


৫. স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচারণ কর। (সূরা নিসা ১৯)


৬. স্ত্রীর প্রতি সব সময় আন্তরিক থাকা এবং তার ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


واسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا؛ فإنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِن ضِلَعٍ، وإنَّ أعْوَجَ شَيءٍ في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فإنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وإنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أعْوَجَ، فاسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا


তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তুমি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর যদি তুমি তা যেভাবে আছে সে ভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের সাথে কল্যাণমূলক কাজ করার উপদেশ গ্রহণ কর। (বুখারী ৫১৮৫)


উক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায়, নারীর মধ্যে বক্রতার বিষয়টি মৌলিকভাবেই সৃষ্টিগত; অতএব, আবশ্যক হলো সহজসুলভ আচরণ করা এবং ধৈর্য ধারণ করা।


৭. স্ত্রীর বিশেষ চাহিদা পূরণ করার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। আল মাউসুয়া’তুল ফিকহিয়্যা (৩০/১২৭)-তে এসেছে,


 من حقّ الزّوجة على زوجها أن يقوم بإعفافها ، وذلك بأن يطأها ، وقد ذهب جمهور الفقهاء – الحنفيّة والمالكيّة والحنابلة – إلى أنّه يجب على الزّوج أن يطأ زوجته


‘স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল, স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের মাধ্যমে তার পবিত্র জীবন যাপনের প্রতি যত্নশীল হবে। হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অধিকাংশ ফকিহর মতে স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া স্বামীর জন্য ওয়াজিব।’


৮. স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা। হাদিস শরিফে এসেছে, আসওয়াদ রাযি. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে তাঁর স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন তা জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন,


كانَ يَكونُ في مِهْنَةِ أهْلِهِ – تَعْنِي خِدْمَةَ أهْلِهِ – فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ خَرَجَ إلى الصَّلَاةِ


রাসূলুল্লাহ ﷺ স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাযের সময় হতো তখন তিনি নামাযে যেতেন। (বুখারী ৬৭৬)


৯. স্ত্রীর ধর্ম, দেহ, যৌবন ও মর্যাদায় ঈর্ষাবান ও আত্মমর্যাদাবোধ-সম্পন্ন হওয়া এবং এ সবে কোন প্রকার কলঙ্ক লাগতে না দেওয়া। কেননা,  স্ত্রী উত্তম সংরক্ষণীয় ও হিফাজতের জিনিস। লোকের মুখে-মুখে, পরপুরুষদের চোখে-চোখে ও যুবকদের মনে-মনে বিচরণ করতে না দেওয়া; যাকে দেখা দেওয়া তার স্ত্রীর পক্ষে হারাম তাকে সাধারণ অনুমতি দিয়ে বাড়ি আসতে-যেতে না দেওয়া সুপুরুষের কর্ম এবং স্ত্রীর অধিকার। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


إنَّ اللَّهَ يَغَارُ، وإنَّ المُؤْمِنَ يَغَارُ، وَغَيْرَةُ اللهِ أَنْ يَأْتِيَ المُؤْمِنُ ما حَرَّمَ عليه


আল্লাহ তায়আলা তার আত্নমর্যাদাবোধ প্রকাশ করেন এবং মুমিনগণও আত্নমর্যাদাবোধ প্রকাশ করে। আল্লাহর আত্নমর্যাদাবোধ উজ্জীবিত হয় যখন মুমিন তা করে যা তিনি হারাম করেছেন। (মুসলিম ২৭৬১)


অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


اَلدَّيُّوْثُ هُوَ الَّذِيْ لَا يُبَالِيْ مَنْ دَخَلَ عَلٰى أَهْلِهِ


দাইয়ুস হলো সে ব্যক্তি যে, তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করে না। (তাবরানি ১৩১৮০ আততারগিব ওয়াততারহিব ৩৪৭৬)


১০. স্ত্রীকে দ্বীনদারি শিক্ষা দেওয়া। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,


يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلْحِجَارَةُ


হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর…। (সূরা তাহরীম ০৬)


১১. স্ত্রীর পরিবার ও বান্ধবীদের প্রতি বদান্যতা ও সুন্দর আচরণ দেখানো। আয়েশা রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন,


أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ


এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। (মুসলিম ২৪৩৫)


১২. ইসলামী শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে স্ত্রীর মন জয় করা। রাসুলুল্লাহ ﷺ আপন স্ত্রীদের সঙ্গে বিনোদনমূলক আচরণ করেছেন। যেমন, হাদিস শরিফে এসেছে, আয়েশা রাযি. এক সফরে রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তার আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর (অন্য আরেক সফরে) তাঁর সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পেছনে ফেলে দিয়ে বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, هَذِهِ بِتِلْكَ এ বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ ২৫৭৮)


১৩. স্ত্রীর গোপন বিষয় বিশেষ করে মিলনসংক্রান্ত বিষয়গুলো কাউকে না জানানো। হাদিস শরিফে এসেছে, আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাযি. বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে ছিলাম, আর তাঁর সেখানে অনেক পুরুষ ও মহিলাও বসেছিল। তিনি বললেন, সম্ভবতঃ কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীর সাথে যা করে তা (অপরের কাছে) বলে থাকে এবং সম্ভবতঃ কোন মহিলা নিজ স্বামীর সাথে যা করে তা (অপরের নিকট) বলে থাকে? এ কথা শুনে মজলিসের সবাই কোন উত্তর না দিয়ে চুপ থেকে গেল। আমি বললাম, ’জী হ্যাঁ। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! মহিলারা তা বলে থাকে এবং পুরুষরাও তা বলে থাকে।’ অতঃপর তিনি বললেন,


فَلَا تَفْعَلُوا فَإِنَّمَا مِثْلُ ذَلِكَ مِثْلُ الشَّيْطَانُ لَقِيَ شَيْطَانَةً فِي طَرِيقٍ فَغَشِيَهَا وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ


তোমরা এরূপ করো না। যেহেতু এমন ব্যক্তি তো সেই শয়তানের মত, যে কোন নারী-শয়তানকে রাস্তায় পেয়ে সঙ্গম করতে লাগে, আর লোকেরা তার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে। (আবু দাউদ ২১৩৩)


১৪. একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ


যার দু’জন স্ত্রী আছে আর সে তার মধ্যে একজনের প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়ে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধাঙ্গ অবস্থায় আসবে। (আহমাদ ২৭৫৮৩)


১৫. শাসন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


اتَّقُوا اللَّهَ في النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ ذلك فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غير مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ


তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে স্থান না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছেদের হুকুম রয়েছে। (মুসলিম ১২১৮)


১৬. আল্লাহর কাছে দোয়া করা। কীভাবে দোয়া করতে হবে আল্লাহ আমাদের তা শিখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,


رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍۢ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا


‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো (সূরা ফুরকান ৭৪)


আল্লাহ তাওফীকদাতা।


والله أعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন

শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী


Wednesday, June 5, 2024

ইসলামে পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

ইসলামে পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

 



নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে একটি পরিবার। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবার হচ্ছে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট বা শাখা। পরিবারের জন্ম তথা উৎপত্তি বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে সামাজিক জীবনের প্রাথমিক বুনিয়াদ বৈবাহিক সম্পর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই জন্য ইসলাম সমাজে বিবাহ প্রথাকে সহজতর করে দিয়েছে। কতিপয় নিকটাত্মীয় এবং পৌত্তলিক নারী ব্যতীত সকলের সাথে বিবাহ বন্ধনকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অতঃপর পারিবারিক জীবনে যদি কোন প্রকার বিঘ্নের সৃষ্টি হয়, যাতে কোন অবস্থাতে ঐক্যবিধান সম্ভব হয়ে না ওঠে, তাহলে পুরুষের জন্য তালাক এবং স্ত্রীর জন্য ‘খোলা’র (দেনমোহর মাফ করে দেয়া বা অন্য কোন অর্থ বা সম্পদ দানের মাধ্যমে স্বামীর  নিকট তালাক গ্রহণ)  অধিকার ইসলামে স্বীকৃত রয়েছে। এ ভাবেই ইসলাম নারী-পুরুষের অধিকারকে সংরক্ষণ করেছে। ইসলাম পবিত্র বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে সামাজিক পবিত্রতা রক্ষার যে সুন্দরতম বিধান দিয়েছে তার ব্যতিক্রমে সামাজিক পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হওয়া স্বাভাবিক। তাই সে এ পন্থায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ফলে উদ্ভূত সমস্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছে এবং বিবাহ পদ্ধতিকেও সহজ করে দিয়েছে। এমনকি এক স্ত্রীতে যদি কারও বাস্তব অসুবিধা থাকে সেক্ষেত্রে তাকে একাধিক স্ত্রী গ্রহণেরও অনুমতি দিয়েছে। তবুও যদি কেউ শরীয়তের নিয়ন্ত্রণসীমা অতিক্রম করে অবৈধ যৌন সম্ভোগে লিপ্ত হয় তাহলে তার জন্য কঠিনতম শাস্তির ব্যবস্থা ইসলামে রয়েছে। ইসলামী শরীয়ত এরূপ অপরাধীর জন্য কশাঘাত এবং প্রস্তর আঘাতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়েছে।


পারিবারিক জীবন এবং নারী-পুরুষের দায়িত্ব


পারিবারিক জীবন এবং নারী-পুরুষের কর্মসীমা ও দায়িত্ব সম্পর্কে ইসলাম বিশেষ কতগুলো পথনির্দেশ প্রদান করেছে। নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত দিকগুলো আলোচনা করা হলো:


ক. আল্লাহ্ পুরুষকে পরিবার তথা সংসারের অভিভাবক করে সৃষ্টি করেছে। শুধু তা-ই নয়, অর্থোপার্জন এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের গুরুদায়িত্বও অর্পিত হয়েছে পুরুষের ওপর। মহান আল্লাহ বলছেন:


﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَآ أَنْفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ﴾


"পুরুষরা নারীদের ওপর দায়িত্বশীল (কর্তৃত্বের অধিকারী) এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের কতককে (পুরুষকে) কতকের (নারীর) ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন  এবং যেহেতু তারা (নারীদের জন্য) তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে থাকে।” (নিসা: ৩৪)


আলোচ্য আয়াতে পরিবারের গণ্ডিতে নারীদের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব যে পুরুষের তার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আয়াতে পরিবারে নারীদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্ব ও অভিভাবকত্বের বিষয়টি নারী-পুরুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তবে পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বের দিককে পরিবারের গণ্ডির বাইরে সকল ক্ষেত্রে (জ্ঞান, চরিত্র, কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা) সার্বিক ভাবার কোন অবকাশ নেই এবং কখনই তা সার্বিকভাবে সকল নারীর ওপর সকল পুরুষের সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলছে না। কারণ, পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে শ্রেষ্ঠত্বের যে ক্ষেত্রগুলো বর্ণিত হয়েছে তা নারী-পুরুষ সকলের জন্য অর্জনযোগ্য বলেছে এবং হযরত মারইয়াম (আ.), হযরত আছিয়ার মত নারীদের পুরুষদের জন্যও আদর্শ গণ্য করেছে (সূরা তাহরীম: ১১ ও ১২)। তাছাড়া অনেক নারীই প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে পুরুষদের ছাড়িয়ে যেতে পারে বা প্রকৃতিগতভাবেই অধিকতর যোগ্যতার অধিকারী হতে পারে। কিন্তু তার এ যোগ্যতা সত্ত্বেও পরিবারের দায়িত্বশীল পুরুষই থাকবে।


অপর পক্ষে নারীর ওপর অর্পিত হয়েছে ঘরকন্না, শিশুপালন, শিশুর শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাংসারিক দায়িত্ব। মহানবি (সা.) বলেছেন: নারী তার স্বামীর গৃহের কর্ত্রী হিসাবে তার স্বামী ও সন্তানদের দায়িত্বশীল (বুখারী, হাদিস নং ৭১৩৮ ও মুসলিম, হাদিস নং ১৮২৯) অপর এক হাদিসে এসেছে যে, এক নারী মহানবি (সা.) এর নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল,  আমার এমন একটি প্রশ্ন আছে যা কিয়ামত পর্যন্ত সকল নারীর প্রশ্ন আর তা হল: কেন ইসলাম পুরুষ ও নারীর মধ্যে সওয়াবের ক্ষেত্রে পার্থক্য করেছে? কেননা অনেক কাজ আছে যাতে পুরুষরা সওয়াব লাভ করে কিন্তু নারীরা তা থেকে বঞ্চিত যেমন জিহাদ ও সীমান্তরক্ষা…।’ মহানবি (সা.) বললেন: নারীর জন্য জিহাদ ও সংগ্রাম হল উত্তম পরিবার ব্যবস্থাপনা।


হযরত আলীও বলেছেন: আল্লাহ পুরুষ ও নারী উভয়ের ওপরই জিহাদ ফরয করেছেন। তবে পুরুষের জন্য জিহাদ হল জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা ও নিহত হওয়া; কিন্তু নারীর জন্য জিহাদ হল উত্তমরূপে সংসার পরিচালনা করা। (ওয়াসায়িলুশ শিয়া, ১১তম খণ্ড, পৃ.১৫)


হযরত আলী নারীদের প্রকৃতি সম্পর্কে বলেছেন: নারীদের ওপর তার সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দিও না। কেননা, তারা বসন্তের ফুলের ন্যায়, বলবান বীর নয়। (নাহজুল বালাগা, ৩১ নং পত্র)


ইসলাম নারীর ওপর পর্দার নির্দেশ জারি করেছে এবং তাকে সংসারের অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব


লনে উদ্বুদ্ধ করেছে। এ ছাড়া ইসলাম স্বাভাবিক অবস্থায় নারীকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে, নিষেধ করেছে তার অলংকার ও রূপ সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করতে। হ্যাঁ, বিশেষ প্রয়োজনবশত বাইরে যেতে হলেও পর্দা রক্ষা করে যেতে বলা হয়েছে:


﴿وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُولَىٰ﴾


‘নিজ নিজ ঘরে অবস্থান কর। অন্ধকার যুগের নারীরা যেভাবে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বাইরে ঘোরাফেরা করত তদ্রূপ কর না।’ (আহযাব: ৩৩)


খ. নারী-পুরুষ তথা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ককে অত্যন্ত পবিত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর এই পারস্পরিক সম্পর্ককে উন্নত ও নিবিড় করার জন্য কুরআন মানব-মানবীকে উদ্বুদ্ধ করেছে। উভয়কে উভয়ের প্রতি আন্তরিকতা এবং সহানুভূতিশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কুরআনের ভাষায়:


﴿...هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ...﴾


‘তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছদস্বরূপ...।’ (বাকারা: ১৮৭)


﴿وَمِنْ آيَاتِهِ اَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ اَنفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً﴾


‘আল্লাহর বহুবিধ নিদর্শনের মধ্যে এও একটি নিদর্শন যে, তিনি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্য নারী (স্ত্রী) সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্য, তোমরা তাদের দ্বারা আনন্দ ও শান্তি লাভ করবে। বস্তুত আল্লাহ্ তোমাদের পরস্পরের মধ্যে প্রেম ও সহানুভূতির উদ্রেক করেছেন।’ (রূম: ২১)


বলাবাহুল্য স্বামী-স্ত্রী উভয় উভয়ের জন্য শান্তির আধার।


গ. নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্কের উদ্দেশ্য শুধু আনন্দ উপভোগ, যৌন সম্ভোগ এবং আত্মতৃপ্তি লাভ করাই নয়, স্বয়ং একে ইসলামী শরীয়া একটি তামাদ্দুনিক/সাংস্কৃতিক ও নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলেই গণ্য করেছে। এর মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের বংশধারা সংরক্ষণ। এই উদ্দেশ্য ঠিক তখনই ফলপ্রসূ হতে পারে, যখন নারীসমাজ একমাত্র সন্তান জন্ম দেওয়াকেই যথেষ্ট মনে না করে; বরং সন্তান জন্ম দেওয়ার সাথে সাথে তার শিক্ষা-দীক্ষা এবং প্রতিপালনের সুষ্ঠু দায়িত্বও নারীকে পালন করতে হবে। এ কারণেই কুরআনে নারীকে (মানব বংশ উৎপাদনের) ‘ক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি বিশেষ প্রক্রিয়া ও কর্মপ্রণালীর মাধ্যমে ক্ষেত থেকে যেমন ফসল উৎপন্ন হয়, তেমনিভাবে নারী জাতির ক্রোড় থেকেও আদম সন্তানকে উপযুক্তভাবে তৈরি হয়ে সমাজে পদার্পণ করা উচিত।


ঘ. ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের ওপর নির্ভরশীল। একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে স্ত্রীদের মধ্যে যাবতীয় দিক দিয়ে সমভাবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসলাম পুরুষদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে বিশেষ কারও প্রতি ঝুঁকে পড়তে নিষেধ করেছে। আদেশ করা হয়েছে ভারসাম্য রক্ষার জন্য।


﴿...فَلاَ تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلْمُعَلَّقَةِ...﴾


‘...তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড় না এবং অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রেখ না।...’ (নিসা: ১২৯)


স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনকি এটা এক পর্যায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদেরও কারণ হয়ে যেতে পারে। যদি এই রূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তবে তা ভব্যজনোচিত এবং পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই হতে হবে। এমনকি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে যা ইতঃপূর্বে দেওয়া হয়েছিল তা ফিরিয়ে নিতে নিষেধ করা হয়েছে।


﴿وَإِنْ أَرَدْتُّمُ ٱسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَاراً فَلاَ تَأْخُذُواْ مِنْهُ شَيْئاً أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَاناً وَإِثْماً مُّبِيناً﴾


‘যদি তোমরা এক স্ত্রীর (তালাক দিয়ে তার) স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং তাদের (স্ত্রীদের) একজনকে অনেক ধন-সম্পদও দিয়ে থাক, তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না।’ (নিসা: ২১) বরং আরও অতিরিক্ত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে:


﴿...فَمَتِّعُوهُنَّ وَسَرِّحُوهُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا﴾


‘...তাদেরকে আরও কিছু মালসামগ্রী প্রদান করে সুন্দর তথা ভদ্রভাবে বিদায় দাও।’ (আহযাব: ৪৯)


পরিবারে মাতা-পিতা ও সন্তানদের পারস্পরিক সম্পর্ক


স্বামী-স্ত্রীর কর্মক্ষেত্র ও কর্মসীমা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের সুষ্ঠু পদ্ধতিসমূহ বর্ণনা করার পর মাতা-পিতা ও ছেলে-মেয়েদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। পিতা-মাতার সাথে ছেলে-মেয়েদের কীরূপ সম্পর্ক এবং ব্যবহার হওয়া উচিত এ ব্যাপারে কুরআনের সুস্পষ্ট এবং ব্যাপক শিক্ষা রয়েছে। বলা হয়েছে যে, তাদের (মাতাপিতাকে) ‘উহ্’ করার মতো কষ্টদায়ক কথাও যেন বল না।  অর্থাৎ তোমাদের কথা এবং কাজে এমন কিছু কর না যা তাদের জন্য মনোকষ্টের কারণ হতে পারে। কুরআনের নির্দেশ হচ্ছে:


﴿وَٱخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيراً﴾


‘তাদের সামনে ভালবাসার সাথে নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল: হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (বনি ইসরাঈল: ২৪)


এ ছাড়া পিতা-মাতা যতক্ষণ


ইসলামী শিক্ষা ও মূলনীতির স্পষ্ট বিরোধী কোন নির্দেশ না দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আদেশ অমান্য করা যাবে না। অর্থাৎ ইসলামী শিক্ষা ও মূলনীতির স্পষ্ট পরিপন্থী কোন নির্দেশ পিতা-মাতা কর্তৃক ছেলে-মেয়েদের ওপর আরোপিত হলে তা পরিত্যাজ্য। অপর পক্ষে ছেলে-মেয়েদের সৎ ও উপযুক্ত নাগরিকরূপে গড়ে তোলার জন্য পিতা-মাতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলাম অন্ধকার যুগের অনুসরণে খাদ্যাভাব এবং দারিদ্র্যের ভয়ে শিশু তথা সন্তান-সন্ততিকে হত্যা করতে নিষেধ করেছে। এরূপ কর্মকে অমার্জনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পিতা-মাতার অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে তাদের ছেলেমেয়েদের ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া এবং অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখা।


হযরত ইসমাইল (আ.)-এর আলোচনা প্রসঙ্গে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (ইসমাইল) তাঁর পরিবারবর্গকে নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদান করার নির্দেশ দিতেন। (মারইয়াম: ৫৫)


এছাড়া কুরআন মুমিনদেরকে তাদের পরিবারের উদ্দেশ্যে একটি সুন্দরতম দো‘আ শিক্ষা দিয়েছে। দো‘আটি এই:


﴿وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ اِمَامًا﴾


‘...হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রীবর্গ ও সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে আমাদের চক্ষুসমূহের উজ্জ্বলতা দান কর এবং আমাদের মুত্তাকী তথা খোদাপরায়ণ লোকদের ইমাম নিযুক্ত কর।’ (ফুরকান: ৭৪)


আলোচ্য আয়াতে ‘মুত্তাকী’ অর্থে তাফসীরকারগণ পরিবারভুক্ত লোকদের বোঝাতে চেয়েছেন।


পরিবার সংগঠনের পর ইসলাম আত্মীয়বর্গের সাথে সৌহার্দ্র্য প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে কোন তারতম্য করা হয়নি; বরং সকলই এর মধ্যে শামিল রয়েছে। ইসলামের উপস্থাপিত এই মূলনীতি ও নির্দেশ অনুযায়ী রক্ত অথবা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে একটি দৃঢ়বন্ধন এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে। একই পরিবারভুক্ত লোকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য পরস্পরকে সহানুভূতিশীল এবং দয়াদ্রচিত্ত হওয়ার তাকিদ দেওয়া হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে নিকট আত্মীয়ের হক অধিক। তাই নিকটাত্মীয়ের সাথে সমধিক সৌহার্দ্র্য রক্ষা করার জন্য কুরআনে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।


﴿...وَبِٱلْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَذِى ٱلْقُرْبَىٰ...﴾


‘...পিতা-মাতা এবং নিকট আত্মীয়দের সাথে ইহসান কর...।’ (বাকারা: ৮৩)


সন্তানদের শিষ্টাচার শিক্ষা


﴿وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ٭وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ﴾


‘যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল: হে বৎস! আল্লাহর সাথে শরীক কর না, কেননা শিরক হল মহা অন্যায়। আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, অবশেষে আমারই দিকে ফিরে আসতে হবে। আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ (লুকমান: ১৩-১৪)


ইমাম সাজ্জাদ (আ.) পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অধিকার সম্পর্কে বলেছেন:


‘আর তোমার সন্তানের অধিকার হলো এটা জানবে যে, সে তোমার থেকেই এবং এই দুনিয়ায় তোমার সাথেই সম্পর্কযুক্ত, ভালো হোক আর চাই মন্দ হোক। তোমার উপরই তার পৃষ্ঠপোষকতার ভার। তাকে ভালভাবে প্রতিপালন এবং তার মহাপ্রতিপালকের প্রতি নির্দেশনা দানের মাধ্যমে এবং তাকে তোমার ব্যাপারে ও তাঁর নিজের ব্যাপারে আনুগত্যের ক্ষেত্রে সাহায্য করার মাধ্যমে তুমি সওয়াব লাভ করবে। আর অবহেলা করলে শাস্তি পাবে। কাজেই তার জন্য এমন কোন কাজ করো যাতে অস্থায়ী এ দুনিয়ায় তার সুফল পায়, আর তোমার ও তার মধ্যে সম্পর্ককে শোভামণ্ডিত কর, যাতে প্রতিপালকের কাছে তাকে উত্তমরূপে পৃষ্ঠপোষকতা এবং তার থেকে যে খোদায়ী ফল লাভ করেছ তার কারণে ক্ষমার পাত্র হতে পারো।’


সুতরাং ইসলাম পরিবারকে উত্তম সমাজের ভিত্তি বলে গণ্য করেছে এবং একে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিধানও বর্ণনা করেছে। সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পারিবারিক জীবনে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রগুলোকে আলাদা করেছে। ইসলামের পরিবার ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়কে তার আত্মিক অবস্থানুযায়ী দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। তারা একে অপরের পরিপূরক। তারা স্ব স্ব স্থানে তাদের দায়িত্ব পালন করলেই কেবল একটি পরিপূর্ণ ও আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব



পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে ইসলামের বাণী  ছড়িয়ে দিতে আপনি ও সহযোগী হউন

সুরায় কাউসার বাংলা উচ্চারণ সহ ও সারমর্ম ।

সুরায় কাউসার বাংলা উচ্চারণ সহ ও সারমর্ম ।

 


সুরায় কাউসার বাংলা উচ্চারণ সহ ও সারমর্ম ।

সূরাতুল কাউসার (আরবি: سورة الكوثر) মুসলিমদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৮ম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩টি। কুরআনের সংক্ষিপ্ততম সূরা, যা দশটি শব্দ এবং বিয়াল্লিশটি অক্ষর নিয়ে গঠিত এবং পবিত্র কুরআনের ক্রমানুসারে সুরা আল-মাউনের পরে এবং সূরা আল-কাফিরুনের পূর্বে রয়েছে। আল-কাউসার ত্রিশতম পারায় অবস্থিত এবং মুহাম্মদ হাদি মারেফাতের মতে নাজিলের ক্রমানুসারে এর অবস্থান ১৫তমের দিকে যা ইবনে আব্বাসের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ইবনে ইসহাকের মতে, এটি পূর্ববর্তী "মাক্কী সূরা", যা মক্কায় ইসরা ও মিরাজের কিছু আগে নাজিল হয়েছিল বলে মনে করা হয়।


সূরাটি নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বলে। জান্নাতের অন্যতম নদী বা ঝর্ণা আল-কাওসার,তার সম্পর্কে আবদুল্লাহ বিন ওমর বলেন: আল্লাহর রসূল বলেছেন: "আল-কাউসার জান্নাতের একটি নদী, তার পাড় সোনার এবং তার গৌরব এলম ও নীলকান্তমণির চেয়ে উত্তম গন্ধ কস্তুরীর চেয়ে ভাল এবং এর পানি বরফের চেয়ে সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি।"


নামকরণ

এই সুরার নাম টি এর প্রথম আয়াত থেকে উদ্ভূত। "কাওসার" শব্দটি কুরআনে একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। আল-কাওসার প্রথম আরবি অর্থ "প্রাচুর্য" এর কবিতায় ব্যবহৃত হয়। রাঘেব ইস্পাহানি তার বই দ্য বুক অব সিংগুলারিটিজে "প্যারাডাইস ক্রিক" শব্দ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, যে এটি নবী মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরের আল্লাহ বিরাট কল্যাণ ও অনুগ্রহ। মাজমাই আল-বাহরাইন এবং আবু মনসুর 'আব্দ আল-মালিক আল-সা'লাবির ফিকহ-এ তারিহির অর্থ "কল্যাণের প্রভু"। আল-আরবের ইবনে মাঞ্জুরী কাওসারের অর্থকে "সবকিছুতে ভাল" বলে মনে করেন এবং কাওসারের বিভিন্ন অর্থ ও ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। আল-কামুস আল-মুহিয়াত ফিরুজাবাদী আল-কাওসার অর্থ "প্রচুর পরিমাণে" এবং "খাঁড়ি" বা "করুণাময় মানুষ" এর মতো অন্যান্য অর্থকে বুঝিয়েছেন।


যদিও ইবনে আশুর, একজন সুন্নি তাফসিরবিদ, শুধুমাত্র সূরার নামকে "কাওসার" বলে মনে করেন।


শানে নুযূল

যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায়, আরবে তাকে নির্বংশ বলা হয়। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পুত্র আল-কাসেম আথবা ইবরাহীম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন কাফেররা তাকে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগল। ওদের মধ্যে 'আস ইবনে ওয়ায়েলের' নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রসূলুল্লাহ্‌ -এর কোন আলোচনা হলে সে বলতঃ আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোন চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চাচরণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল কাওসার অবতীর্ণ হয়।


আয়াতসমূহ উচ্চারণ ও অর্থ সমুহ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ 

উচ্চারণঃ বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম

অনুবাদঃ পরম করুনময় মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। 


إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ

উচ্চারণঃ ইন্নাআ‘তাইনা-কাল কাওছার।

অনুবাদঃ নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাউসার (বা প্রভূত কল্যাণ) দান করেছি।


فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

উচ্চারণঃ ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার।

অনুবাদঃ অতএব আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কড়ুন এবং কুরবানী করুন।


إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ

উচ্চারণঃ ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।

অনুবাদঃ নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই লেজকাটা, নির্বংশ।


বিষয়বস্তুর বিবরণ

সারকথা, পুত্রসন্তান না থাকার কারণে কাফেররা রসূলুল্লাহ্‌ (সা.) -এর প্রতি দোষরোপ করত আথবা অন্যান্য কারণে তার প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করত। এরই প্রেক্ষাপটে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়। এতে দোষরোপের জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, শুধু পুত্রসন্তান না থাকার কারণে যারা রসূলুল্লাহ্‌ (সা.)-কে নির্বংশ বলে, তারা তার প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে বে-খবর। রসূলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর বংশগত সন্তান-সন্ততিও কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যদিও তা কন্যা-সন্তানের তরফ থেকে হয়। অনন্তর নবী আধ্যাত্নিক সন্তান অর্থাৎ, উম্মত তো এত অধিকসংখ্যক হবে যে, পূর্ববর্তী সকল নবীর উম্মতের সমষ্টি অপেহ্মাও বেশি হবে। এছাড়া এ সূরায় রসূলুল্লাহ্‌ (সা.) যে আল্লাহ্‌ তা'আলার কাছে প্রিয় ও সম্মানিত তাও তৃতীয় আয়াতে বিবৃত হয়েছে।


হাদিস

কুরআনের প্রথম ও সর্বাগ্রে তাফসির মুহাম্মদের হাদিসে পাওয়া যায়। যদিও ইবনে তাইমিয়াহ সহ আলেমরা দাবি করেন যে মুহাম্মদ সমগ্র কুরআন সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ইমাম গাজ্জালি সহ অন্যরা সীমিত পরিমাণ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, এভাবে তিনি কেবল কুরআনের একটি অংশের ব্যাখ্যা করেছেন। হাদিস (حديث) আক্ষরিক অর্থে "বক্তৃতা" বা "প্রতিবেদন", এটি ইসনাদ দ্বারা বৈধ মুহাম্মদের কথা কাজ ও মৌন সম্মতির রেকর্ড; সিরাতে রসুল আল্লাহর সাথে এগুলির মধ্যে রয়েছে সুন্নাহ এবং শরিয়ত প্রকাশ। আয়িশার মতে নবী মুহাম্মদের জীবন ছিল কুরআনের ব্যবহারিক বাস্তবায়ন। তাই, হাদিস নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাসঙ্গিক সূরার ব্যাখ্যার উচ্চতর হাতিয়ার। এই সূরাটি হাদিসে বিশেষ সম্মানের সাথে উপস্থাপিত হয়েছে, যা এই সম্পর্কিত আখ্যানগুলি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।